সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম সংক্রান্ত রিটের পক্ষে গত সোমবার হাইকোর্টে শুনানি করতে গিয়েছিলেন আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী। ওই দিন শুনানি করতে দাঁড়ালে আদালত তাকে বলে, ‘আপনাকে আমরা দেখে আসতে বলেছিলাম ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির’ পক্ষে রিট করার লোকাস স্ট্যান্ডাই (এখতিয়ার) ছিল কি না?’
উত্তরে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ওই কমিটি ছাড়াও প্রত্যেকে আলাদা আলাদাভাবে আবেদনকারী ছিলেন। আদালত বলে, ‘আমরা দেখছি কমিটির পক্ষে রিট আবেদনটি করা হয়েছে।’ চৌধুরী বলেন, ‘শুনানির সময় আমরা বিস্তারিত বলব।’ এরপর আদালত বলেন, ‘কমিটির রিট আবেদন করার লোকাস স্ট্যান্ডাই নাই। রিট রিজেক্টেড, রুল ডিসচার্জড।’
আদালতে কী বলতে চেয়েছিলেন? গতকাল এই প্রশ্নের জবাবে সুব্রত চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা বলতে চেয়েছি, রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকতে পারে না। বিষয়টি এমন নয় যে, আমরা রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ হওয়ার কারণে কথা বলছি। রাষ্ট্রধর্ম ‘হিন্দু’ বা অন্য কোন ধর্ম হলেও এর বিরোধিতা করতাম।
তিনি বলেন, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাকাটা জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রের এই চার মূলনীতিবিরোধী। ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত ১২ অনুচ্ছেদের সঙ্গেও এটি সাংঘর্ষিক। এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার, (ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন, বিলোপ করা হইবে।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, সংবিধানে সংগঠনের স্বাধীনতা দেয়া সংক্রান্ত ৩৮ অনুচ্ছেদের সঙ্গেও রাষ্ট্রধর্ম থাকার বিষয়টি সাংঘর্ষিক। এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে: তবে শর্ত থাকে যে, কোন ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না, যদি- (ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জš§স্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (গ) উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; বা (ঘ) উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানের পরিপন্থী হয়।’
সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায় বের হলে পড়ে দেখব, কেন খারিজ হয়েছে। এরপর আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’ -আমাদের সময়.কম
Discussion about this post