বিডি ল নিউজঃ কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না, তা ‘ভেবে’ জানাবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার আইনজীবীরা একথা জানানোর পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যেই তা ভেবে ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাতে হবে জামায়াতে ইসলামীর এই নেতাকে।
তবে রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষক নেছার উদ্দিন এবং জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলীর সঙ্গে কথা বলে কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের যাওয়ার তথ্য পাওয়া তো যায়নি; বরং বিষয়টি সম্পর্কে তারা জানেনই না। তিন দিন আগে কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজের পর অ্যাটর্নি জেনারেলসহ রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা ফাঁসি কার্যকরে বাধা নেই বলে আসছেন।
তবে এরপর সময় গড়ালেও একাত্তরের এই আল বদর নেতার দণ্ড কার্যকরের উদ্যোগ না দেখে ক্ষোভ আসছে বিভিন্ন মহল থেকে।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, ‘দেরি’ করে বিদেশি সংস্থা ও লবিস্ট গ্রুপগুলোকে তদবিরের সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি জামায়াতকে নাশকতার জন্য সংগঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
ফৌজদারি মামলায় ফাঁসির রায় কার্যকরের আগে প্রাণভিক্ষার আনুষ্ঠানিকতার জন্য ৭ থেকে ২১ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া থাকলেও যুদ্ধাপরাধের আসামির ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না বলে আগেই জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
গত সোমবার রিভিউ খারিজের রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রাণভিক্ষার আবেদন নিষ্পত্তির জন্য আইনে সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। আসামি কখন প্রাণভিক্ষা চাইবেন- সে বিষয়েও স্পষ্ট কোনো বিধান নাই।
এর আগে কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশন খারিজের রায়ে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার জন্য ‘যৌক্তিক সময়’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
“তবে এর মানে এই নয় যে, ৭ দিন বা ১৫ দিন সময় পাবে। জেল কর্তৃপক্ষ এটা তাকে (কামারুজ্জামানকে) জানাবে, জানানোর পর একটি সময় প্রদান করা। সেটা বিবেচনা করবে জেল কর্তৃপক্ষ,” বলেন মাহবুবে আলম।
সোমবার পরিবারের সদস্যরা দেখা করার পর বলেছিলেন, প্রাণ ভিক্ষার বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবেন কামারুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে দেখা করতে যান পাঁচ আইনজীবী।
এরপর তার অন্যতম আইনজীবী শিশির মনির কারা ফটকে সাংবাদিকদের বলেন, “উনি বলেছেন, এর পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি চিন্তা করবেন, ভেবে দেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে তা জানাবেন।”
সাবেক ছাত্রশিবির নেতা শিশির মনির বলেন, কামারুজ্জামান তাদের কাছে রিভিউ খারিজের রায়ের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন, তাদের সঙ্গে পরামর্শ নিয়েছেন।
“উনি আমাদের কাছে আইনের বিধি বিধান সম্পর্কে জেনেছেন। দেশে কী নজির রয়েছে জানতে চেয়েছেন। আমরা আইনজীবী হিসাবে যথাসাধ্য জানাতে চেষ্টা করেছি।”
২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধ মামলার প্রথম আসামি হিসেবে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের আগে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না- এ প্রশ্নে শিশির মনির বলেন, “বাকি বিষয়গুলো নিতান্তই তার সিদ্ধান্তের বিষয়। উনি আমাদের কাছে আইনের প্রভিশনগুলো জানতে চেয়েছেন। আমরা তাকে সাধ্যমতো জানিয়েছি। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।”
ভেবে দেখার জন্য কামারুজ্জামান কত সময় নেবেন- এ প্রশ্নে এই আইনজীবী বলেন, “তিনি রিজনেবল সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।…উনি ভাবনার সময় নিয়েছেন, চিন্তার সময় নিয়েছেন, কখন কারা কর্তৃপক্ষকে জানাবেন… কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত জানাবেন।”
এই যুদ্ধাপরাধী ‘শারীরিকভাবে সুস্থ ও মানসিকভাবে বিচলিত নন’ বলে জানান তার আইনজীবী।
এরপর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “সেটা তো আমাদের আজকেই জানাতে হবে, তিনি চান (কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষা চান কি না) কি না। আমাদের কাছে যে নির্দেশ এসেছে আদালত থেকে সে অনুযায়ী আইজি প্রিজন্স কাজ করছেন।”
তিনি বলেন, ‘আদালতের রায়ের নির্দেশনা ও কারাবিধি’ অনুযায়ীই তারা সব পদক্ষেপ নেবেন।
“মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কামারুজ্জামানের সঙ্গে কিছু সময়ের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেখা করবেন। কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন করলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। অন্যথায় রায় দ্রুত কার্যকর করবে সরকার।”
প্রাণভিক্ষা না চাইলে বৃহস্পতিবারই এই যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকর করা হবে কি না- এ প্রশ্নে কামাল বলেন, “আজই হবে কি না তা আমি বলতে পারব না। তবে সময়মতোই কার্যকর হবে।”
রায় কার্যকরে ‘কোনো বিলম্ব হচ্ছে না’ মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আপনারা নিশ্চিত থাকেন, যথাযথভাবেই এ প্রক্রিয়া শেষ হবে। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট তার কাছে যাবে। তার বক্তব্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এরপর রাতে কারা কর্মকর্তা নেছার উদ্দিন ও ফরমান আলীর সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কথা বললে জানা যায়, ম্যাজিস্ট্রেট যাওয়ার কোনো খবরই তাদের জানা নেই।
তবে ‘স্পর্শকাতর’ উল্লেখ করে দণ্ড কার্যকরের বিষয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি তারা।
একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ৯ মে ময়মনসিংহের আল বদর কমান্ডার কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে সেখানেও তার সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল থাকে।
সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য কামারুজ্জামানের আবেদন গত সোমবার খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ।
বুধবার দুপুরে রায়ে বিচারপতিদের সইয়ের পর তা কারাগারে পাঠানো হয়। কারা কর্তৃপক্ষ ওই রায় পড়ে শুনিয়ে ‘প্রাণভিক্ষা করবেন কি না’ জানতে চাইলে কামারুজ্জামান আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সময় চান।-বিডিনিউজ২৪
Discussion about this post