বিবিসির সংলাপে বক্তারা
সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার দরকার নেই। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানো হলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করবেন। এতে দ্বৈত শাসনের পরিবেশ তৈরি হবে। আজ রোববার বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে আলোচকেরা এমন মত দেন।
বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন ও বিবিসি বাংলা বিভাগ যৌথভাবে রাজধানীর টিসিবি মিলনায়তনে এই সংলাপের আয়োজন করে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আকবর হোসেন।
গত বুধবার উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন হওয়া জরুরি। এ লক্ষ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা উচিত। তাঁরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর ও ক্রিয়াশীল করার ওপরও গুরুত্ব দেন। এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর প্রশ্নে রাষ্ট্র বিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনার দরকার নেই। রাষ্ট্রপতিকে বেশি ক্ষমতা দেওয়া হলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করবেন। এতে দ্বৈত শাসনের পরিবেশ তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণ করবে সংসদ ও মন্ত্রিসভা। তা ছাড়া এ বিষয়ে আমরা পাকিস্তান থেকে যে অভিজ্ঞতা পাই, তা মোটেও ভালো নয়। সেখানে রাষ্ট্রপতি বারবার সরকার ভেঙে দিয়েছেন। সেটা গণতন্ত্রের জন্য মোটেই ভালো নয়। বরং বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে কীভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা যায়, সে নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যায়।’
রওনক জাহানকে সমর্থন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী নির্বাচনের জন্য সর্বদলীয় সরকার হতে পারে। তবে সে বিষয়ে নাগরিক সমাজ নয়, দলগুলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
প্রশ্নপর্বে এক দর্শক বলেন, রাষ্ট্রপতিকে বেশি ক্ষমতা দেওয়া হলে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি হবে। এ বিষয়ে সুশীল সমাজের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। অতীতে তারা জাতির সঙ্গে শঠতা করেছেন। অপর এক দর্শক বলেন, রাষ্ট্রপতি নয়, বরং নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ালে সব ধরনের রাজনৈতিক সংকট কেটে যাবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, সংসদ থেকে ৫০ জন নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হলে লাভ হবে না। বরং নাগরিক সমাজ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনার যে প্রস্তাব দিয়েছে, দেশের মানুষ এখন তাই চায়।
এর বিরোধিতা করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা সংবিধানে আছে। সে জন্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর দরকার নেই। তবে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা যেতে পারে।
১০৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আনিসুল হক, রওনক জাহান ও মনজুরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার বিষয়টি নিছক সামরিক অভ্যুত্থান ছিল না। এর পেছনে দেশের ভেতরের ও বাইরের রাজনৈতিক শক্তি জড়িত ছিল। সংবিধানে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে পশ্চিমা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো উদ্বিগ্ন ছিল। একাত্তরের পরাজিত শক্তি খন্দকার মোশতাক আহমদ ও জিয়াউর রহমানের কাঁধে ভর করে তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
এ সময় এক দর্শক বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর যে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখনো অব্যাহত আছে।
এ ব্যাপারে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আওয়ামী লীগের ভেতরের শক্তিই ১৫ই আগস্ট তৈরি করেছিল। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল কিছু বিপথগামী সামরিক কর্মকর্তা। সেই সময় জাসদ বিরোধিতা না করলে ১৫ আগস্টের সৃষ্টি হতো না।
পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পর্কিত প্রশ্নে বিএনপি নেতা নোমান বলেন, ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ যখন চুক্তি করে, তখন পাহাড়ের সমস্যা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেনি। যে কারণে পাহাড় এখনো অস্থির। এই সমস্যা সহসা যাবে না।
একই বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ চুক্তি করলেও বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেয়নি। যে কারণে চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ পিছিয়ে যায়।
রওনক জাহান বলেন, চুক্তির বাস্তবায়ন ধীর গতিতে হয়েছে। পাহাড়িদের যতটা স্বায়ত্তশাসন ও ক্ষমতা দেওয়ার দরকার ছিল, তা দেওয়া হয়নি। ভূমি জটিলতার সুরাহা করেনি।
রওনক জাহানকে সমর্থন করে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, হতাশা থেকে পাহাড়ের মানুষ হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত শতভাগ দর্শক হাত তুলে বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে কর আরোপের বিষয়টিকে সমর্থনযোগ্য নয় বলে মত দেন। তাঁদের সঙ্গে একমত পোষণ করেন রওনক জাহান, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল নোমান।”প্রথম আলো
Discussion about this post