রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদা অনুযায়ী (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) নিজেদের অবস্থান দাবি করেছেন আইনজীবীরা। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক বর্ধিত সভায় সারা দেশের আইনজীবী সমিতির নেতারা এ দাবি তোলেন।
আইনজীবী নেতারা বলেন, কারাগারে গেলে একজন আইনজীবীকে চোর, ডাকাত, মাদকসেবীদের সঙ্গে থাকতে হয়। সরকারি প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে আইনজীবীদের কোনো কোটা নেই। অন্য ক্ষেত্রেও আইনজীবীদের কোনো অবস্থান নেই। তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘হু উই আর? (আমরা কারা?), আমাদের অবস্থান কোথায়? আমরা স্ট্যাটাস চাই। স্ট্যাটাস না থাকাটা আইনজীবী সমাজের জন্য লজ্জাকর।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদারের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা সঞ্চালনা করেন কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু। সভায় উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু এমপি, ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, বার কাউন্সিলের সদস্য ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, কাউন্সিলের সদস্য জেডআই খান পান্না, পারভেজ আলম খান, মো. ইয়াহিয়া, এইচআর জাহিদ আনোয়ার প্রমুখ। এ ছাড়া সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, বার কাউন্সিলের সচিব সিনিয়র জেলা জজ একেএম জহিরুল আলমসহ সারা দেশের আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাগামহীন সনদ বাণিজ্যের কারণে আইনাঙ্গনে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। ২১ জুলাই হাইকোর্ট একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। এ রায় বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বাণিজ্যের অবসান হবে। যে কেউ ইচ্ছে করলেই আর আইন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে না। এ বিষয়টি বার কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। বার কাউন্সিলের মাধ্যমে এমসিকিউ ও লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে। এতে করে আইন শিক্ষার্থীদের মান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। সমাজে আইনজীবীদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।
সাম্প্রতিক জঙ্গি ইস্যু তুলে ধরে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদকে রুখতে না পারলে কেউই নিরাপদ নয়। সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদ কার্যক্রম দেশের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জঙ্গিবিরোধী জনমত গঠনে আইনজীবী ও আইনজীবী সমিতিগুলোকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। জঙ্গি প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত কার্যক্রমে বার কাউন্সিল সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
আইনজীবীদের স্বার্থে কাজ করে যওয়ার অঙ্গীকার করে বাসেত মজুমদার বলেন, “দুস্থ ও দরিদ্র আইনজীবীদের সহায়তার জন্য আমি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দুই লাখ টাকা করে অনুদান দিয়ে প্রতিটি আইনজীবী সমিতিতে একটি করে ‘আবদুল বাসেত মজুমদার আইনজীবী কল্যাণ ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠা করেছি। আমি আমার অর্জিত অর্থ শুধু নিজেই ভোগ করতে চাই না, আইনজীবীদের স্বার্থেও ব্যয় করে যেতে চাই। আমি চাই অন্য আইনজীবীরাও এভাবে এগিয়ে আসুক।” তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সব আইনজীবীকে কোর্ট অফিসার হিসেবে ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে’ অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে বর্তমান বার কাউন্সিল কাজ করছে। বার কাউন্সিলের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ, ১০০ শতাংশ জমি বরাদ্দ ও বেনাভোলেন্ড ফান্ডের জন্য সরকারের কাছে অনুদান চাওয়া হয়েছে।
যশোর আইনজীবী সমিতির সভাপতি কাজী আবদুস শহীদ লাল আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা শুধু নিজেদের স্বার্থেই কথা বলে গেলেন। কিন্তু বিচার বিভাগের স্বাধীনতার আজ কী অবস্থা? সুপ্রিমকোর্ট থেকে শুরু করে প্রতিটি আদালতে দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। যার টাকা আছে সে বিচার পাচ্ছে। সাধারণ মানুষ কয়জন বিচার পাচ্ছে? ন্যায়বিচারের বিষয়টি আইনজীবীদেরও দেখার দায়িত্ব রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কী অবস্থা বার কাউন্সিলের বাথরুমগুলোর? কত টাকার তহবিল আপনারা পেয়েছেন, ফান্ডে কত টাকা আছে, সমিতিগুলো থেকে কত টাকা পান- এগুলোর কোনো হিসাব আমরা জানি না। এগুলো জানার অধিকার আমাদেরও রয়েছে।’ তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করে অনেকেই বক্তব্য দেন।
সভায় কল্যাণ ফান্ডের টাকা বৃদ্ধি, সমিতিগুলোর এফডিআরের টাকার ওপর থেকে উৎস কর বাতিল, বার কাউন্সিল ভবনের গেস্টহাউজ ও ক্যান্টিনের মান উন্নয়ন, লিগ্যাল এডুকেশন প্রোগ্রাম পুনরায় চালু, একজন আইনজীবী একটি সমিতিতে ভোট প্রদানের যোগ্যতা ও একটি সমিতি থেকে বেনোভোলেন্ট ফান্ডের টাকা পেতে পারেন সেই ব্যবস্থা গ্রহণ, বেনোভোলেন্ট ফান্ডের বরাদ্দ আইনজীবীপ্রতি ৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা টাকা করা, কোনো আইনজীবী কারাগারে গেলে যেন ডিভিশন পেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এরপর সভাপতির বক্তব্যে আবদুল বাসেত মজুমদার এসব প্রস্তাব পূরণের আশ্বাস দেন।
সভায় দেশের সব আইনজীবী সমিতিতে আগামী ২৮ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী মানববন্ধন’ পালনে সিদ্ধান্ত হয়। আইনজীবী ও শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের ড্রেস, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের জন্য আইনজীবী ভোটারদের ছবি, মোবাইল নম্বর দিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন নিশ্চিতসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
Discussion about this post