নিজস্ব প্রতিবেদক: সদ্য বহিষ্কৃত নরসিংদী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ কাণ্ডে তোলপাড় সারাদেশ। ১৫ দিনের রিমান্ডে বেরিয়ে আসছে অনেক রথী-মহারথীর নাম। প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া পিলে চমকানো তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষস্থানীয় দুই নেত্রী এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এক সংসদ সদস্যের প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন শামীমা নূর ওরফে পাপিয়া। ওই তিনজনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয় তার।
জাল টাকা উদ্ধার, অস্ত্র ও মাদকের পৃথক তিন মামলায় গ্রেফতার নরসিংদীর জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক পাপিয়ার ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তার স্বামী মফিজুর রহমানেরও ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। বিমানবন্দর থানার মামলায় গ্রেফতার চারজন আসামি হলেও শেরেবাংলা নগর থানার মামলার আসামি কেবল পাপিয়া দম্পতি।
পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কায়কোবাদ কাজী বলেন, তিনি যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল এবং যুব মহিলা লীগ ঢাকা উত্তরের সভাপতি সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের নাম বলেছেন। সব অভিযোগ যাচাই করা যায়নি।
সব কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাপিয়া নিজে বাঁচার জন্যও উপর মহলের সংশ্লিষ্টতার কথা বলতে পারেন। তাই তার দেয়া তথ্য যাচাই করতে এরই মধ্যে হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। এখনও ফুটেজ বিশ্লেষণ করার সুযোগ হয়নি। যেসব রাজনৈতিক নেতা, আমলা বা ব্যবসায়ীর নাম এসেছে প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গত সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদুর রহমান ও মোহাম্মদ জসীম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর মধ্যে বিমানবন্দর থানার জাল টাকা উদ্ধারের মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদুর রহমান পাঁচ দিন, শেরেবাংলা নগর থানার অস্ত্র ও মাদক আইনে দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পাপিয়া, তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে মতি সুমনসহ চারজনকে গতকাল মঙ্গলবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে রাজধানীর বিমানবন্দর থানার পুলিশ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে অবস্থান করে সুন্দরী যুবতীদের দিয়ে পাপিয়া পরিচালনা করতেন অবৈধ দেহব্যবসা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া ও তার স্বামী অনেক অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। কারো মাধ্যমে কোনো কাজ হাসিল করতে চাইলে সুন্দরী যুবতীদের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে পাপিয়া কৌশলে তার ডেরায় নিয়ে আসতেন।
পরে গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ক্লিপসের ভয় দেখিয়ে টার্গেট পূরণ করতেন তিনি। মানসম্মানের ভয়ে ওই ব্যক্তিরাও পাপিয়ার নির্দেশের বাইরে যাওয়ার সাহস দেখাতেন না। এরই মধ্যে পাপিয়া-সুমন দম্পতি তাদের ব্যবসার নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছেন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, পাপিয়াকে গ্রেফতার করতে ও বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি দলের মধ্যে যারা অপকর্ম করছেন, তাদেরও গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
Discussion about this post