মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর সেনাবাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। কর্মসূচীতে আওয়ামী ও বিএনপি সমর্থিত কয়েকশত আইনজীবীরা অংশ নেন। কর্মসূচী হতে আইনজীবীরা মিয়ানমারের দূতাবাস ঘেরাওয়ের দাবি জানান।
একইসঙ্গে তারা বলেন, এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধে অবশ্যই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া মানবিক কারণে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেয়ারও আহ্বান জানান তারা।
আইনজীবীরা বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সাং সূচিকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তার দেশেই এই হত্যাযজ্ঞ চলছে। নোবেল কমিটির উচিত সূচির নোবেল পুরস্কার বাতিল করা।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচী পালন করে আইনজীবীরা। কর্মসূচীতে যোগ দেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া।
সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের অধিকার আজ ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে। চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। জাতিসংঘকে এই হামলা বন্ধে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় মা-বাবা সন্তানের লাশ নিয়ে আহাজারি করছে, এমন দৃশ্য বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দিচ্ছে। সেখানে তারা আর্তনাদ করছে যে, আমাদেরকে বাংলাদেশের কারাগারে হলেও রাখেন।
এ অবস্থায় সাধারণ আইনজীবীদের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশে জাতিসংঘ অফিসের সঙ্গে আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধি দেখা করবে বলেও উল্লেখ করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
তিনি বলেন, আমরা সমিতির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করবো। এছাড়াও অ্যামনেস্টিসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আমরা দেখা করে নির্যাতন বন্ধের দাবি জানাবো। তবে প্রাথমিকভাবে আগামী রোববার (২৭ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, মিয়ানমারে যা ঘটছে তা মানবাধিকারের চরম লংঘন। জাতিসংঘ এই হামলা বন্ধ করতে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে জাতিসংঘ মিশন ঘেরাও করতে হবে।
সাবেক সম্পাদক ও বার কাউন্সিল ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান শম রেজাউল করিম বলেন, অবশ্যই এ ধরনের মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানাই। তবে এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যেন সংখ্যালঘুদের প্রতি কোন বিদ্বেষ সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সমিতির সম্পাদক এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, রোহিঙ্গাদের উপর হামলা জাতির বিবেককে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
মানববন্ধনে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত কোটি উদ্বাস্তু লোককে আশ্রয় দিয়েছিল। অথচ আমরা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে পারছি না। নির্যাতিত মানুষ প্রাণভয়ে ফিরে আসলেও আমরা তাদের পুশব্যাক করে ফিরিয়ে দিচ্ছি। অথচ চীন ও ফিলিপাইন এসব রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন- তার দেশে এক ইঞ্চি খালি জায়গা থাকা পর্যন্ত তিনি শরণার্থী গ্রহণ করতে থাকবেন।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, আইনজীবী নেতা আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট সাইফুদ্দিন, অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন প্রমুখ।
Discussion about this post