রাজধানীর আশকোনায় র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পে আত্মঘাতী হামলা চালানো যুবকের কাঁধে থাকা ট্রাভেল ব্যাগসদৃশ বস্তুটি নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছিল। কি ছিল তাতে? সেই জঙ্গি কিংবা তাদের নেটওয়ার্কের কোনো বার্তা ছিল কিনা। আশকোনার ক্যাম্পে বিস্ফোরণের পর বোমা ডিস্পোজাল ইউনিটের সুইপিংয়ের সময় অদ্ভুত সিগন্যাল দিচ্ছিল ব্যাগটি।
র্যাবের ধারণা ছিল ব্যাগে হয়তো বোমা থাকতে পারে। দীর্ঘ পরীক্ষার পর জানা গেল সেটি কোনো ব্যাগই ছিল না। এটি ছিল বিশেষ ধরনের বোমা। বোমাটি ব্যাগসদৃশ দেখা যাচ্ছিল। বাংলাদেশে এ ধরনের বড় ও শক্তিশালী হাতে তৈরি বোমা আগে কখনো ব্যবহার হয়নি। এটা ব্যাগের মতো কাপড় পেঁচানো ছিল।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, দূর থেকে দেখে সবাই মনে করেছিল এটি ব্যাগ। কিন্তু সেটি ছিল বোমা। বোমাটি পরবর্তীতে নিষ্ক্রিয় করে র্যাব।
এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর আশকোনায় হজক্যাম্প সংলগ্ন র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে হামলাকারী যুবক ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত হন র্যাবের দুই কর্মকর্তা।
ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা। আলামত সংগ্রহ করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা। নিজেদের মতো করে আলামত সংগ্রহ করে র্যাব।
ব্যাগসদৃশ বোমাটি ছাড়াও ওই জঙ্গির মরদেহের পাশে কালো-হলুদ-সাদা রঙের একটি ক্যাপ, স্যান্ডেল, গামছা, কালো কাপড়ের টুকরা পাওয়া যায়। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে ৭-৮ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে মামলা করে র্যাব।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনার পর থেকেই আশকোনার আশপাশ এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ যাচাই-বাছাই চলছে। তবে এখনো সন্দেহভাজন কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি। সন্দেহভাজন কয়েকটি মোবাইল ট্র্যাকিং করে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
এদিকে শনিবার সকালে নিহত জঙ্গিকে নিজের সন্তান দাবি করে র্যাব ক্যাম্পে হাজির হন আমিরুন বিবি নামের এক নারী। তাকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। ওই নারীর বিষয়ে মুফতি মাহমুদ বলেন, ওই নারী প্রথমে দাবি করলেও পরে স্বীকার করেন নিহত জঙ্গি তার ছেলে নয়। তার ছেলে বাড়ি ফিরেছে। এরপর তিনিও চলে যান।
তবে বিমানবন্দর থানার ওসি বলেন, তিনি র্যাব হেফাজতে আছেন। র্যাব তাকে পাঠালে দুজনের ডিএনএ পরীক্ষা করে তার দাবির সত্যতা যাচাই করা হবে।
তবে জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে একটি দৈনিক পত্রিকা দাবি করেছে, নিহত জঙ্গির নাম জুয়েল রানা। তার বাড়ি ফরিদপুরে।
এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহে শুক্রবারই মো. হানিফ মৃধা নামে একজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। শনিবার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যান। তবে রোববার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি পরিবার দাবি করে, হানিফকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়। এ বিষয়ে র্যাব ও ডিবির কেউ কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।
Discussion about this post