হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি চাঁদপুরের শতবর্ষী নারী অহিদুন্নেসার রিভিউ আবেদন গ্রহণ করে তাকে কারামুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট।
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি এ বৃদ্ধাকে আইনি সহায়তা দিয়েছে জাতীয় আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা ঢাকা লিগ্যাল অ্যাইড।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা) নেতৃত্বধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতি বেঞ্চে গতকাল সোমবার অহিদুন্নেসার রিভিউ আবেদন গ্রহণ করে এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
যদিও শতবর্ষী নারীকে মুক্তি দেয়া হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা)।
এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মাননীয় চিফ জাস্টিস স্যারের অনুকম্পায় ইতোমধ্যে অহিদুন্নেসার পাশে দাঁড়িয়েছে লিগ্যাল অ্যাইড। অহিদুন্নেসাকে আইনি সহায়তা দিয়েছে এ সংস্থাটি।’
সাব্বির ফয়েজ আরো বলেন, ‘গত ২৯ জুন চিফ জাস্টিস স্যার কাশিমপুর কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে কথা বলেছিলেন অহিদুন্নেচ্ছার সঙ্গে। আশ্বাস দিয়েছিলেন আইনি সহায়তা দেয়ার। সে অনুযায়ী অহিদুন্নেসা রিভিউ আবেদন করেছিলেন। সে অবেদনের শুনানি করে সোমবার আদালত তাকে মুক্তির নির্দেশ দেন।’
অহিদুন্নেছা। বয়স ১শর কাছাকাছি। জীবনের এ সাঁঝ বেলায় হেসেখেলে কাটানোর কথা নাতি নাতনিদের সঙ্গে। কিন্তু একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এ আসামী এতোদিন কারা অন্ধকারে গুণছিলেন মৃত্যুর প্রহর। তবে হঠাৎ দেখছেন, আশার আলো। গেল ২৯ শে জুন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে যান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। সেখানেই দেখতে পান অহিদুনেচ্ছাকে।
২০ বছর সাজা ভোগ করা এ নারী প্রধান বিচারপতিকে জানান তার বয়স এখন ১০০ বছর। আইনানুযায়ী খাটতে হবে আরও ১০ বছরের জেল। চোখে দেখেন না, একা চলা ফেরাও করতেও পারেন না। তাই জীবন শেষ বেলায় মুক্তি চান প্রধান বিচারপতির কাছে। ওহিদুনেচ্ছার দাবি, মিথ্যে মামলায় এতো বছর জেল খাটছেন। আপিল করতে চেয়েও পারেননি পরিবারের সব পুরুষ সদস্যরা একই মামলায় জেলে থাকায়।
যা শুনে বিস্মিত প্রধান বিচারপতি জেল সুপারকে নির্দেশ দেন মামলার রিভিউয়ের ব্যবস্থা করার। ১৯৯৭ সালে দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলায় চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ একই পরিবারের ১৬ আসামীর মধ্যে ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ওহিদুজ্জামানসহ ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে, তা খারিজ করেন হাইকোর্ট।
কাশিমপুরে গিয়ে সেদিন প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘শতবর্ষী একজন মানুষ সমাজের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। এজন্য তার মুক্তির উদ্যোগ নিতে জেল আপিল করতে হবে।’
Discussion about this post