নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে মুন সিনেমা হলের মালিককে ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সা বুঝিয়ে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এই জায়গা বুধবারের (১৮ ডিসেম্বর) মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে রেজিস্ট্রি করে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এবং আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ জমির মালিক মাকসুদুল আলমকে এ চেক হস্তান্তর করেন।
এর আগে, ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাট এলাকার আলোচিত মুন সিনেমা হলের মালিককে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন আপিল বিভাগ। এ সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, পুরান ঢাকার ওয়াইজ ঘাটে একসময়ে মুন সিনেমা হলের মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ইটালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম এই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন।
পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঘোষিত এক সামরিক ফরমানে সরকার কোনো সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলা হয়। কিন্তু পরে ইটালিয়ান মার্বেল ২০০০ সালে হাইকোর্টে ওই ফরমানসহ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করেন।
ওই মামলায় শুনানি শেষে ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে মোশতাক, সায়েম ও জিয়ার ক্ষমতাগ্রহণ সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। পাশাপাশি ৯০ দিনের মধ্যে ইটালিয়ান মার্বেলকে মুন সিনেমা হল ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সম্পত্তি ফিরে পেতে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আপিল বিভাগ ওই সম্পত্তি অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ এক প্রকৌশলীকে দিয়ে জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দিয়ে এই মূল্য ঠিক করতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই প্রতিবেদন অনুসারে মুন সিনেমা হল মালিককে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
Discussion about this post