বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কে এম শফিউল্লাহ সম্পর্কে কঠোর মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এ ছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এ হত্যাকাণ্ডের পথ পরিষ্কার করে দিয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি।
আজ রোববার সন্ধ্যায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন শেখ সেলিম। ধানমন্ডি, কলাবাগান, হাজারিবাগ ও নিউমার্কেট থানা আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে শেখ সেলিম বলেন, ‘শেখ মণি (শেখ সেলিমের বড় ভাই শেখ ফজলুল হক মণি) মারা যাওয়ার দেড়-দুই ঘণ্টা পর বঙ্গবন্ধুকে মারা হয়। শফিউল্লাহ, মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে। আর্মি চিফ ছিল। মণি ভাই মারা যাওয়ার দেড়-দুই ঘণ্টার পর বঙ্গবন্ধু মারা গেল। কেউ বলে ৬টা ৪৭ মিনিট। বঙ্গবন্ধু সবার কাছে ফোন দেছে। কর্নেল শাফায়াত ছুটে আসছিল। আর উনি (কে এম শফিউল্লাহ) বসে বুড়ো আঙুল চুষছে।’ তিনি বলেন, ‘এটা তো কোনো সেনা অভ্যুত্থান ছিল না। বিপথগামী সেনা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনারা এটা করেছিল। যখন তারা অস্ত্র নেয়, তখনই তাঁদের কোর্ট মার্শাল হওয়া উচিত ছিল। উনি (শফিউল্লাহ) আগায় আসলো না। কেন ওই দিন বঙ্গবন্ধুর বাসার দিকে শাফায়াত জামিলকে সঙ্গে নিয়ে পাঁচখানা, দশখানা ট্রাক আসে নাই। কীসের জন্য শফিউল্লাহ নীরব ছিল?’
শেখ সেলিম কে এম শফিউল্লাহকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘উনি বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন আপনি একটু বাসা থেকে বেরোয় যাইতে পারেন না। বঙ্গবন্ধুকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আর্মির ভয়ে বাসা থেকে পালায় না, আর তাঁর বানানো আর্মি দেখে উনি পালায় যাবেন। ক্যান তুমি আসতে পারলা না?’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সেলিম বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ডেপুটি চিফ ছিল। সেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। এখন বিস্তারিত কিছু বলব না। জিয়াউর রহমান, শাফায়াত জামিল, খালেদ মোশাররফ কী করেছিল এ প্রশ্নের জবাব একদিন দিতে হবে। এ জন্য একটা তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। দেড়শো জন সেনা কর্মকর্তার কাছে কীভাবে দেড় লাখ সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে?’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছয়টার পরে মারা গেল আর শফিউল্লাহ রেডিও স্টেশনে গিয়ে বিপথগামী সৈনিকদের সঙ্গে গেল। সে কেন অর্ডার দিল না, যারা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে গেছে, তাঁরা আর ঢুকতে পারবে না। এরা ক্যান্টনমেন্টে ঢুকলে এদের অ্যারেস্ট করা হোক। অ্যারেস্ট করা হলো না। ডালিম গেল, নূর গেল, এরা কিন্তু সবাই অবসরপ্রাপ্ত। ওইখানে গিয়ে তাঁকে (শফিউল্লাহ) নিয়ে আসল। উনি বললেন, খুনি মুশতাকের সরকারের প্রতি উনি আনুগত্য স্বীকার করবেন। কিন্তু রক্তের সঙ্গে যারা বেইমানি করছে তাঁরা কখনো ভালো থাকতে পারে নাই। বঙ্গবন্ধু সিঁড়ির ওপর পড়ে ছিল, জিয়াউর রহমানও সিঁড়ির ওপর পড়ে ছিল। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তাঁর করুণ পরিণতি হতো না। খালেদ মোশাররফও ওই পথে চলে গেছে।’
শেখ সেলিম বলেন, ‘কর্নেল তাহের বঙ্গবন্ধু যেদিন মারা যায়, সেদিন সেও রেডিও স্টেশনে যায়। জাসদের গণবাহিনীর প্রধান ছিলেন। একটা সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে সে গণবাহিনী করেছিল। যাঁকে বঙ্গবন্ধু সহানুভূতিশীল হয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান বানাইছিল, সেও ওই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরবর্তীতে তো দেখেছিলেন ক্ষমতার ভাগাভাগিতে তাহেরের কী হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘জাসদই বঙ্গবন্ধুর হত্যার পথ পরিষ্কার করে দিয়েছিল। এই মুক্তিযুদ্ধের নামধারী জাসদ কী বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, কী বিপ্লব ঘটাবে? যেহেতু জাসদের কর্মীরা মুজিববাহিনী, মুক্তিবাহিনী, গণবাহিনীতে ছিল। স্বাধীনতাবিরোধীরা কখনো বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না, যদি এই গণবাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি মেরে যদি পরিবেশ সৃষ্টি না করত। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর হত্যার মূল রহস্য বের করতে হবে, কারা কারা জড়িত ছিল।’
ঢাকা-১০ আসনের সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ধানমন্ডি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমেদ, কলাবাগান থানার সভাপতি নাজমুল করিম, হাজারীবাগ থানার সভাপতি ইলিয়াছুর রহমান, নিউমার্কেট থানার সভাপতি জসিম উদ্দিন প্রমুখ।-প্রথম আলো
Discussion about this post