মেহেদী হাসান সোহাগ(মাদারীপুর): হাতের নক পানিতে ডুবিয়ে, পানি পড়া, ঝাড়-ফুক ইত্যাদি দিয়ে রোগীর সব ধরণের চিকিৎসা হয়। রোগীদের আনা তেল ও পানির মধ্যে হাতের নক জুবিয়ে তা খেতে দেয় রোগীদের।
এছাড়া তেল পড়ে শরীরের মালিশ করার কথা বলে ওই ফকির। এতে রোগীর সব রোগ ভাল হয় বলে দাবী তার।
লিভার, ক্যান্সার, জন্ডিস, মাথা-পেটব্যাথা থেকে জটিল যে কোন রোগের বিনা মুল্যে চিকিৎসা দিচ্ছে। কথিত ভন্ড ফকির নাজমুল হোসেন জনি (৪০) অপচিকিৎসা করেই ক্ষান্ত হয়নি। মাত্র ৩৪ দিনের মাথায় আশ্রয় দাতার একমাত্র মেয়ে ক্ঠাালবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী অপ্রাপ্ত বয়স্কা শিউলিকে বিয়ে করে ঐ ভন্ড ফকির।
শনিবার বিকেলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে শিউলিকে নিয়ে আত্মগোপন করেছে কথিত ভন্ড ফকির। এ কারনে বিদ্যালয়ের সহ-পাঠিদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রায় ৩৫দিন আগে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়ি বাংলাবাজার গ্রামের আরশেদ আলীর বাড়িতে আশ্রয় নেয় কথিত ফকির নাজমুল হোসেন জনি।
এলাকার মানুষের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দেয়া শুরু করে। হাতের নক পানিতে ডুবিয়ে, পানি পড়া ঝাড় ফুক ইত্যাদি দিয়ে রোগীর সব ধরণের চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ পর্যন্ত ৪০ হাজার রোগীর চিকিৎসা শেষে মাত্র ২৮ জন রোগী এখানো ভাল হয় নাই আর সকলেই ভালো হয়েছে- এ দাবী কথিত ভন্ড ফকির নাজমুল হোসেন জনির।
এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, কথিত ভন্ড ফকির এলাকায় ভন্ডামি করেই ক্ষান্ত হয়নি। কু-নজর পড়ে মেধাবী ছাত্রী শিউলির দিকে। মাত্র অল্প কয়েক দিনের মধ্যে তাকে বিয়ে করে। কাঠালবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী শিউলি আক্তার। সে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। ক্লাসের রোল নং-০২।
বিদ্যালয়ের ভর্তি রেজিষ্টার মতে শিউলির জন্ম তারিখ ৫-০৩-২০০০ইং। শিউলি অসুস্থ্য হলে তাকে চিকিৎসা দেয় ওই ভন্ড ফকির জনি। সেই সুবাধে তাকে বশ করে অবশেষে গত বৃস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে বিয়ে করে।
ঘটনা জানাজানির পর শনিবার সকালে মাদারীপুরের মিডিয়াকর্মীরা উপস্থিত হন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের বিয়ের কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি মিডিয়াকর্মীদের।
ঐ দিন বিকেলে প্রশাসনের টনক নড়ে। শনিবার বিকেলে পুলিশ ওই বাড়িতে হানা দেয়। কিন্ত তার আগেই ভন্ড ফকির নাজমুল হোসেন জনি তার নব-বিবাহিত শিউলিকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
কথিত ভন্ড ফকির নাজমুল হোসেন জনি রাজধানীর কেরানীগঞ্জের ডাকপাড়া গ্রামের কামাল বেপারীরর ছেলে।
কাঠালবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহপাঠিরা জানান, শিউলি খুবই মেধাবী ছাত্রী। ভন্ডফকির শিউলির সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সহপাঠিরা কোন ভাবেই অপ্রাপ্ত বয়স্কা শিউলি বেগমের বিয়ে মানতে পারেনি। এমনটি প্রতারণা করে মেধাবী মেয়ে শিউলিকে বিয়ে করার অপরাধে কথিত ভন্ড ফকিরের দৃষ্টান্ত মূলক বিচারের দাবী জানিয়েছেন তারা।
আগত রোগী ও এলাকার জনগণ জানান, কথিত ভন্ড ফকিরের সহযোগীরা ওই এলাকায় দোকানপাট গড়ে তোলেছে। ভন্ড ফকির সব ধরণের চিৎিসার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে।
একই গ্রামের মো. রফিক খান, আবু শিকদার ও আলতু খান সহ তিন চারজনের একটি চক্র তৈরি হয়েছে। তারা ওই বাড়ির সামনে দোকান দিয়েছে। রোগিদের কাছে পানি তৈল বিক্রি করে। সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়।
কথিত ভন্ড ফকিরের সহযোগী ও দোকানদার মো. রফিক খান জানান, ফকির আসার পর থেকে যত রোগি ও চিকিৎসা করেছেন তারা সকলেই ভাল হয়েছেন। এলাকার মানুষ ফকিরকে পেয়ে বিনা টাকায় চিকিৎসা করতে পারছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে ভন্ড ফকিরে সঙ্গে তাদের বিয়ে হয়েছে বলে মেধাবী ছাত্রী শিউলি বেগম ও তার বাবা স্বীকার করেন।
কাঠাল বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. তারা মিয়া জানান, দশম শ্রেনির ছাত্রী শিউলি খুবই মেধাবী। শিউলি আগামী বছর অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ গ্রেড অর্জনের সম্ভবনা ছিল বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
ভন্ড ফকির এলাকার রোগিদের বিনা মুল্যে অপ-চিকিৎসা করে। মুলত ওই ভন্ড ফকিরের উদ্দেশ্যেই ছিল-অপ্রাপ্ত বয়স্কা মেধাবী ছাত্রী শিউলিকে বিয়ে করা।
কাঠালবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাহার হোসেন বেপারী জানান, ভন্ড ফকিরের বিষয়টি শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিবচর থানার ওসিকে আমি অবহিত করেছি। কিন্তু দেড়মাসেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় নাই স্থানীয় প্রশাসন কিংবা পুলিশ।
এ ব্যাপারে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হুসাইন জানান, কথিত ভন্ড ফকিরের খবর পেয়ে শনিবার বিকেলে তাকে গ্রেফতার করা ঐ বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি। কিন্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছানোর আগেই ভন্ড ফকির সেখান থেকে আত্মগোপেনে চলে যায়।
Discussion about this post