মেহেদী হাসান সোহাগ(মাদারীপুর): মাদারীপুরের শিবচরে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ট্যালেন্টপুল ও সাধারন বৃত্তি নিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন অবিভাবকরা। এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন অভিভাবকরা।
শিবচর উপজেলা সরকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে উপজেলার মোট ২০৯টি শিক্ষা প্রতিষ্টান থেকে মোট ৬ হাজার ৬ শত ১৬ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরমধ্যে ২হাজার ৮শত ৩৫জন ছেলে এবং ৩হাজার ৭শত ৫৫জন মেয়ে। উপজেলার ১৭৭টি সরকারী, ১টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৩১টি কিন্ডারগার্টেনের ওই সকল শিক্ষার্থরা অংশ নেয়। ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এ বছর ৫২জন শিক্ষার্থী ট্যালেন্টপুলে এবং ১শত ১৪ জন সাধারন গ্রেডে বৃত্তি লাভ করে। এদের মধ্যে কিন্ডারগার্টেনের মাত্র ৮ শিক্ষার্র্থী ট্যালেন্টপুলে এবং ১৯জন শিক্ষার্থী সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি লাভ করে। প্রাথমিক বিদ্যালয় বৃত্তির ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীর অবিভাবকরা বৃত্তির ফলাফল দেখে ব্যাপক কারসাজি ও টাকার বিনিময়ে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে মর্মে উপজেলা সরকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কত্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিভাবকদের লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, এক শ্রেনির দালাল চক্র প্রাথমিক বিদ্যালয় সমাপনি পরীক্ষার পরপরই বিভিন্ন অভিভাবক ও গ্রামা লের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে টাকার বিনিমিয়ে বৃত্তি পাইয়ে দেয়ার ব্যাপারে দেন-দরবার করে। শিবচর উপজেলায় প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল এবং বৃত্তির তালিকা নিয়ে ব্যাপক কারসাজি করে বেশ কটি বিদ্যালয়ের প্রথম সারির মেধাবী শিক্ষার্থীদের (এমনকি যারা সমগ্র শিবচরের মধ্যে মেধাবী হিসেবে আলোচিত এমন ক’জন কে) বৃত্তির তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। শিবচর নন্দকুমার মডেল ইনষ্টিটিউশনে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে ৫শত ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে যারা তাদের নামও বৃত্তি প্রাপ্তদের তালিকায় নাই। এক শ্রেনির দালাল চক্র টাকার বিনিময়ে ট্যালেন্টপুল বা সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পাইয়ে দিবে বলে অবিভাবকদের সঙ্গে মোবাইলে কথো-পকোথন করে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ধীরেন্দ্র চন্দ্র সিকদার মাথাপিছু টাকা নিয়ে বৃত্তির তালিকা প্রস্তুত করে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিবচর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে সংশ্লিষ্ঠ একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, গত দু’বছর ধরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা মিলে অফিসের কম্পিউটার অপারেটরের সহযোগীতায় টাকার বিনিময়ে বৃত্তি ফলাফল উল্টোপাল্ট করা হয়। এর সঙ্গে কিছু অসাধু প্রধান শিক্ষক জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। অসাধু প্রধান শিক্ষকগন অভিবাবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে অন্য কম মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। এ ছাড়াও এ চক্র বদলী বানিজ্য করে বছরে প্রায় ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় শিক্ষকদেও নিকট থেকে। শিবচর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে টাকা ছাড়া কোন কাজই হয় না।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুস ছালাম মিয়া বলেন, এ ব্যাপারে আমি লোকমুখে শুনেছি। যদি ঘটনা সত্য হয় তবে ব্যাপারটি খুবই দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ধীরেন্দ্র চন্দ্র সিকদার বলেন, অন্য উপজেলা থেকে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন শেষে রেজাল্টশীট পাওয়ার পর উপজেলা সমাপনী পরীক্ষা কমিটির সভাপতি শিবচর উপজেলা নির্বার্হী অফিসারের নির্দেশ মোতাবেক সিডি করে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রেরণ করা হযেছে। তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত টাকার বিনিময়ে বৃত্তি প্রদানের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
Discussion about this post