রাজধানীর শাহজাহানপুরে পাইপের ভেতরে পড়ে মারা যাওয়া শিশু জিহাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশ স্থগিত করেননি চেম্বার আদালত। তবে দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (০১ মার্চ) রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করলে শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ আদেশ দেন।
এসময় আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করীম ও ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়েছে, কিন্তু চেম্বার আদালত স্থগিত না করে নিয়মিত বেঞ্চে লিভ টু আপিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি করা হয়েছে।’
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শাহজাহানপুরে পাইপের ভেতরে পড়ে মারা যাওয়া শিশু জিহাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে রায় দেন হাইকোর্ট।
ওইদিন সংক্ষিপ্ত রায়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ কত টাকা ও কারা কারা এ ক্ষতিপূরণ দেবে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়ে জানা যাবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। তবে এখনো পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়নি। সংক্ষিপ্ত আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ শুনানি শেষে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেননি।
তবে গত বছর এ বিষয়ে জারি করা রুলে আদালত ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ও সরকারকে বিবাদী করেছিল। এসময় রিটকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ রায়ের মাধ্যমে বুঝা গেলো- জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় সরকারি কর্তৃপক্ষই দায়ী। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে কারা দায়ী থাকবেন, বা কী ধরনের ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে এ বিষয়ে একটি গাইড লাইন দেবেন আদালত। ১৯৮৩ সালে ভারতে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি চালু হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ৪৫ বছরের মধ্যে এটাই প্রথম।’
এর আগে গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
রুলে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা তার পরিবারেকে দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম বিষয়ে জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এতে হাইকোর্ট বলেছিলেন, শিশু জিহাদের মৃত্যুতে ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, রেলওয়ে ও সিটি করপোরেশনের অবহেলাকে কেন দায়ী করা হবে না এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সারা দেশে কতগুলো অরক্ষিত পাইপ, ঢাকনাবিহীন পাইপের গর্ত, ম্যানহোল ও পয়নিষ্কাশন পাইপ রয়েছে তার একটি তালিকা তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না? একই সঙ্গে জারিকৃত রুলে গত দুই বছরে ফায়ার সার্ভিস কী পরিমাণ যন্ত্রপাতি কিনেছে এবং প্রশিক্ষণ করেছে তার তথ্য আদালতে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাসার কাছে শাজাহানপুর রেলওয়ে মাঠের পাম্পের পাইপে পড়ে যায় জিহাদ। প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর ২৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩টার দিকে জিহাদকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর ২৮ ডিসেম্বর জিহাদের পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে চিল্ড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন। একই দিন জিহাদকে জীবিত উদ্ধারে সরকারি সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা তদন্তে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে অন্য একটি রিট আবেদন দায়ের করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ মাইনুল হক।
রিট আবেদনে তদন্ত কমিটিতে জিহাদের মরদেহ উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবীদের অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করা হয়। আর এ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে জিহাদকে উদ্ধারে গাফিলতিতে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়। জিহাদকে উদ্ধারকারী ৫ যুবককে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করতেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও আগের দুই বছরে ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স কী কী আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করেছে, তার একটি তালিকা আদালতে দাখিলের জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়।
Discussion about this post