শিশু সুরক্ষায় ‘থ্রি-সি’ নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। থ্রি-সি প্রকল্পের আওতায় শিশু শ্রম ও বিবাহ বন্ধ এবং তাদের শারীরিক শাস্তি কমানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হবে। সার্বিকভাবে প্রকল্পটি শিশুদের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। ‘এনাবলিং এনভায়রনমেন্ট ফর চাইল্ড রাইটস’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে এই থ্রি-সি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শ্রমে নিয়োজিত, প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত, স্কুল থেকে ঝরে পড়া ও মাতা-পিতার যত্নবঞ্চিত শিশুরা বিশেষ সহায়তা পাবে। বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের স্কুলগামী করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে শিশু শ্রম, বিবাহ হ্রাস ও জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিতের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া শিশুবান্ধব পরিবেশে শারীরিক, মানসিক বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়ক সেবাও পাবে বঞ্চিত শিশুরা।
সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ প্রকল্পটি দেশের ২০টি জেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জেলাগুলো হলো- রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার।
মাসিক উন্নয়ন প্রতিবেদনে (আইএমইডি) বলা হয়েছে, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শিশুনীতি, ২০১১ এবং জাতিসংঘের শিশু সনদের মূল বিষয় বিবেচনা করে শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ কর্মী বাহিনী তৈরি হয়েছে। (যেমন- সমাজকর্মী ও এনজিওকর্মী)। প্রকল্পের উপকারভোগী হিসেবে শিশু বাছাই করার ক্ষেত্রে কমিউনিটি সংগঠন, স্থানীয় সরকার, সিপিএন কার্যকর হয়েছে। উপকারভোগী প্রতিটি শিশুর সামগ্রিক তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ফলোআপের জন্য কেইস ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা কার্যকর হচ্ছে। সুবিধাবঞ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের জন্য শর্তযুক্ত অর্থ সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশুদের স্কুলগামী করা, শিশু শ্রম কমানো ও শিশু বিবাহ হ্রাসে প্রকল্প ভূমিকা রাখছে।
শ্রমে নিয়োজিত শিশু, প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত, স্কুল থেকে ঝরে পড়া ও মাতা-পিতার যত্নবঞ্চিতদের জন্য শিশুবান্ধব কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। যেখানে শিশুবান্ধব পরিবেশে শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়ক সেবাসমূহ প্রদান করা হয়ে থাকে। অর্থ সহায়তা প্রাপ্তির জন্য জন্ম নিবন্ধন একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হওয়ার কারণে শতভাগ উপকারভোগী শিশুর জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত হয়েছে, যা তাদের নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক রীতি পরিবর্তনে কিশোর-কিশোরীদের একটি বড় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ক্ষমতায়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন- কিশোর-কিশোরী ক্লাব গঠন ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে পিয়ার লিডার তৈরি করা। প্রকল্প বাস্তবায়নে কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। যেমন- সমাজভিত্তিক শিশু সুরক্ষা কমিটি গঠন। সামাজিক রীতি পরিবর্তন ফোরাম গঠনের মাধ্যমে থ্রি-সি এবং আটটি আচরণ পরিবর্তন আনার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) গণমাধ্যমকে বলেন, কিশোর-কিশোরী দল, সমাজ তথা রাষ্ট্রের জন্য একটি বড় শক্তি। চালিকা শক্তি হিসেবে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে সামাজিক রীতিতে পরিবর্তন আনতে কাজ করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকারের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ চলমান রাখা ও টেকসই করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিছু সমস্যা থাকলেও প্রকল্পটি অর্জন কম নয়।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি ২০১২ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩১৮ কোটি ৪০ লাক ২২ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৩ কোটি ১৮ লাখ এবং ইউনিসেফের অনুদান থেকে ৩১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা করা বরাদ্দ দেওয়া হবে। সূত্র: দ্য রিপোর্ট
Discussion about this post