বিডিলনিউজঃ ঘোষণার ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে। ২০১০ সালের অক্টোবরে সরকারি মালিকানাধীন ২৬ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার পুঁজিবাজারে অফলোড করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর স্পষ্ট দিক নির্দেশনাসহ অনুমোদন দিলেও প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতা ও ইস্যু ব্যবস্থাপনায় কোম্পানির দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ৩ বছরেও বেশি সময়ে এ নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি।
জানা গেছে, পর পর কয়েক দফায় সময় বাড়ানোর পরও এসব প্রতিষ্ঠানকে অর্থ মন্ত্রণালয় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ের পর আরো ৫ মাস অতিক্রান্ত হলেও সরকারি মালিকানায় থাকা একটি প্রতিষ্ঠানও পুঁজিবাজারে আসতে পারেনি। এর আগে ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমলেন্দু মুখার্জীর সভাপতিত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিসমূহের দায়িত্বশীলদের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে শেয়ার অফলোড ও বাজারে তালিকাভুক্তির সময়সীমা চলতি বছর জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। ইতিমধ্যে নির্ধারিত সময়ের পরও আরো ৫ মাস অতিক্রান্ত হলেও সিদ্ধান্তটি ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। একটি সরকারি কোম্পানিও পুঁজিবাজারে শেয়ার অফলোড করতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার প্রস্তাবে অনুমোদন দেন। এরপর ৩১ অক্টোবর শিল্প মন্ত্রণালয় ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী ২০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৮ কোম্পানির আরো কিছু শেয়ার বাজারে আসবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ৫১ শতাংশ মালিকানা রেখে বাকি শেয়ার বাজারে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতা ও ইস্যু ব্যবস্থাপনা কোম্পানির দীর্ঘসূত্রতার কারণে ৩ বছরেও বেশি সময়ে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যদিকে, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়লেও পুঁজিবাজারে চাহিদার তুলনায় ভালো শেয়ারের সংখ্যা অত্যন্ত কম।
বিশেষজ্ঞরা অনেক আগেই থেকে বাজারে শেয়ার সরবরাহ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এর অগ্রগতি হয়নি।
জানা যায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ডেসকোর ১০ শতাংশ শেয়ার অফলোডের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী ২০১০ সালে ডিসেম্বরে প্রথমবার নির্দেশনা দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি শেয়ার অফলোড করতে না পারায় ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট আবারো নির্দেশনা দেন। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে গত বছরের ২১ জুন ডিএসইকে চিঠি দেয়া হলেও তার জবাব না পেয়ে পুনরায় এ ব্যাপারে ২১ অক্টোবর চিঠি দেয়া হয়।
গত বছরের মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ কোম্পানিগুলো চলতি বছর জুনের মধ্যে শেয়ার অফলোড করার কথা ছিল। এছাড়া ২০১০ সালের ডিসেম্বরে পাওয়ার গ্রিডের ১৬.২৫ শতাংশ শেয়ার অফলোডের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ২০১২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ৩২১ নম্বর স্মারকের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগকে জানানো হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ কোম্পানির ১৬.২৫ শতাংশ শেয়ার অফলোড করা হয়নি।
এছাড়া লিক্যুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস, বাখারাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন, গ্যাস ট্রান্সমিশন, জালালাবাদ গ্যাস টিএন্ডটি সিস্টেম লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানিকে ডিসেম্বর ২০১০ সালের পর দ্রুততার সঙ্গে তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়। এ ব্যাপারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে গত বছর ১১ জুন অগ্রগতির প্রতিবেদন চাওয়া হলেও এসব কোম্পানির পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় ওই বৈঠকে জুনের মধ্যে তালিকাভুক্তির নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।
এদিকে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানিকে ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো ১০ শতাংশ শেয়ার অফলোডের তাগিদ দেয়া হয়। একই বছরের ৩০ আগস্ট প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজকেও ২য় বারের মতো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি নির্দেশ দেয়া হয়। একই দিন বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডকেও তালিকাভুক্তির বিষয়ে ২য় বারের মতো নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে ব্র্যান্ডিং না হওয়া পর্যন্ত এ কোম্পানির তালিকাভুক্তি স্থগিত রাখা হয়েছে। এছাড়া বিমান বাংলাদেশ, টেলিটক বাংলাদেশ, বিটিসিএল, বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প, টেলিফোন শিল্প সংস্থাকে (টেশিশ), ডিসেম্বর ২০১০ সালের পর দ্রুততার সঙ্গে তালিকাভুক্তির নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু অদ্যাবধি অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়নি। যে কারণে গত বছরের ওই বৈঠকেও এসব কোম্পানির তালিকাভুক্তির বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। কিন্তু এভাবে বহুবার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তার কোনটিই বাস্তবায়ন হয়নি।
Discussion about this post