সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছে, বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধান না থাকায় বিচার বিভাগ জিম্মি হয়ে আছে। নিম্ন আদালতের কিছু বিচারক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। তারা শৃঙ্খলার বাইরে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না। বিচারকদের চাকরি শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যেত।
আজ সোমবার (৭ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত মামলার শুনানিকালে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের উদ্দেশে আপিল বিভাগ এসব কথা বলে।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মাসদার হোসেন মামলার অন্যান্য আদেশগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে, এটাও বাস্তবায়ন হবে। এটা বর্তমানে রাষ্ট্রপতির দফতরে রয়েছে। এ পর্যায়ে আপিল বিভাগ বলে, রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী এটা সরকারের কাজ।
আপিল বিভাগ বলে, কিছু বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে প্রেসিডেন্টের দোহাই দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় সেগুলো ফেলে রাখছে। পাঁচ বছর ধরে বলে যাচ্ছি কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। আমাদের সর্বশেষ আদেশে বিধি প্রণয়ণের কথা বলে দিয়েছিলাম। কিন্তু আপনারা সেটিও করেননি।
শুনানিতে আপিল বিভাগ বলে, পর্যাপ্ত এজলাস না থাকায় নিম্ন আদালত ১৭০ জন বিচারক এক বেলা বিচারকাজে বসতে পারছেন না। এছাড়া যেসব অবকাঠামোগত (ম্যাজিস্ট্রেটি ভবন) সমস্যা রয়েছে সেগুলোর কাজও ধীরগতির ছাপ পরিলক্ষিত।
প্রধান বিচারপতির এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের নয় বিচারপতির বেঞ্চ এই শুনানি চলে।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ঐ রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিলো। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিমকোর্টে পাঠায়।
গত ২৮ আগস্ট এ সংক্রান্ত মামলার শুনানিকালে আপিল বিভাগ বলেছিলো, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিলো ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি। এরপরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। একইসঙ্গে ৬ নভেম্বরের মধ্যে তা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে অবহিত করতে আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়। গতকাল মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের আট বিচারপতির বেঞ্চে এ বিষয়ে কোন অগ্রগতি জানাতে পারেননি অ্যাটর্নি জেনারেল।
Discussion about this post