আন্তর্জাতিক ডেস্ক: খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডের দিনে শ্রীলঙ্কায় গির্জা, পাঁচতারকা হোটেলসহ অন্তত আটটি স্থানে আত্মঘাতী বোমা হামলার পর শুক্রবার রাতে দেশটির পূর্বাঞ্চলের কালমুনাই শহরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান চালিয়েছে লংকান সেনাবাহিনী। এসময় দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে নারী ও ছয় শিশুসহ ১৫ জন নিহত হয়। এছাড়া চার বন্দুকধারীসহ এক বেসামরিক লোক মারা যায়। এই ঘটনার পর দেশটির পূর্বাঞ্চলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করে কর্তৃপক্ষ।
নিহত চার বন্দুকধারী আইএস সদস্য বলে দাবি করেছে শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা বাহিনী। দেশটিতে সিরিজ বোমা হামলায় জড়িতে সন্দেহ ১৪০ জনকে গ্রেফতার অভিযানে নামার পর সন্দেহভাজন এই হামলাকারীদের সাথে সেনাবাহিনীর গোলাগুলি হলো। এই অভিযানে বিপুল পরিমান বিস্ফোরক দ্রব্য, ড্রোন, আইএসএর পোশাকসহ পতাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
অভিযানের বিষয় নিয়ে স্থানীয় পুলিশ জানায়, বাড়িটি ছিলো জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অনুসারীদের।
হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, শুক্রবার রাতে কালমুনাই শহরের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় লংকান সেনাবাহিনী। এসময় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বুঝতে পেরে সেখানে থাকা বাসিন্দারা বোমা মেরে নিজেদের উড়িয়ে দেয়। এর কারণে বাড়িতে অবস্থানরত মোট ১৫ জন মারা যান। এদের মধ্যে রয়েছে তিনজন নারী ও তিনজন পুরুষ। বাকি ছয়জন হচ্ছে শিশু।
প্রসঙ্গত, রবিবারে শ্রীলঙ্কার গির্জা ও হোটেলে সিরিজ বোমা হামলায় নিহতের হয়েছে ৩৫৩ জন। আহত হয়েছে আরো পাঁচ শতাধিক মানুষ। ওই হামলায় নিহতদের অনেককেই গণকবরে সমাহিত হয়েছে। হামলায় মারা যাওয়া ৩০ জনকে প্রথমেই সমাহিত করা হয় নেগোম্বোর শহরের সেইন্ট সেবাস্তিয়ান চার্চে। এই চার্চও হামলার লক্ষ্যস্থল ছিল। দ্বিতীয় দফা গণকবর দেয়া হয় অন্য আরেকটি স্থানে। এছাড়া মোমবাতি জ্বালিয়ে হামলার শিকার চার্চগুলোতে চলে নিহতদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। এছাড়াও, সকল সরকারী, আধা-সরকারী ও বেসকারি প্রতিষ্ঠানেও নিহতদের প্রতি সম্মান জানাতে অর্ধনমিত রাখা হয় জাতীয় পতাকা।
এদিকে, হামলার জন্য স্থানীয় উগ্র ইসলামপন্থী সংগঠন ন্যাশনাল তাওহীদ জামাতকে দায়ী করেছে দেশটির সরকার। এরমধ্যে, বিস্ফোরণের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে অন্তত ৬০ জন সন্দেহভাজনকে। সরকারের মুখপাত্র জানান, আটককৃতদের মধ্যে একজন সিরিয়ানও রয়েছে। স্থানীয় আটক একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই সিরিয়ানকে আটক করা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুয়ান উইজিওয়ারদানে সংসদে জানান, প্রাথমিক তদন্তে এই বোমা হামলাকে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের গত মার্চের চালানো নৃশংসতার প্রতিশোধ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এবিষয়ে বিস্তারিত কোন ব্যাখ্যা দেননি মন্ত্রী।
তবে, হামলার পর থেকে চরম সতর্ক অচবস্থানে রয়েছে কলম্বো পুলিশ। লরি, ট্রাক, বাস থেকে শুরু করে সবধরনের ভারী এমনকি হালকা যানবাহনেও চলছে তল্লাশি। এদিকে, নিরাপত্তার স্বার্থে এবং গুজব বন্ধে এখনো ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপের মতো জনপ্রিয় সামাজিকমাধ্যমগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে দেশটির সরকার।
সিরিজ বোমা হামলায় ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে ‘ইসলামিক স্টেট’ (আইএস)। পরে মঙ্গলবার হামলাকারী দলের মূল পরিকল্পনাকারীসহ আট জঙ্গির ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে জঙ্গি সংগঠনটি৷এএমএকিউ নিউজ এজেন্সিতে প্রমাণস্বরূপ এই ছবি প্রকাশ করে তারা।
আইএসের সাত জঙ্গির নাম হলো- আবু উবাইদা, আবু খলিল, আবু আল মুখতার, আবু হামজা, আবু আল বাররা, আবু আবদুল্লাহ ও আবু মুহাম্মদ৷
এছাড়া এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে শ্রীলঙ্কার উগ্রপন্থী ধর্মীয় নেতা জাহরান হাশিমের ছবি প্রকাশ করা হয়। জঙ্গি সংগঠনটি বলছে, জাহরানই এই হামলার মাস্টারমাইন্ড। তবে সঙ্গে থাকা অন্য সাতজনের মুখ কাপড়ে ঢাকা ছিল। তবে জাহরান হাশিম ওই হামলায় নিহত হয়েছে বলে প্রকাশ করা হয়।
এই সব জঙ্গির প্রশংসা করে আইএস বলেছে- আবু হামজা কলম্বোর অ্যান্টনি গির্জা, আবু খলিল সেন্ট সেবাস্তিয়ান গির্জা, আবু মুহাম্মদ জিয়েন গির্জায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এছাড়া আবু উবাইদা, আবু আল বাররা ও আবু আল মুখতার কলম্বো শহরের মাঝখা সাংগ্রি লা, সিনামুন ও কিংসবারিতে আত্মঘাতী হামলা চালায়৷
এদিকে, দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে না যেতে নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাড়িতেই প্রার্থনা সারতে অনুরোধ করেছে। ইস্টার সানডে ঘটনার পরে দেশজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর একটা বিদ্বেষ ছড়িয়ে পরেছে, হামলার আশঙ্কায় অনেক মুসলিম সদস্য বাড়ি ছেঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ পাওয়া গিয়েছে।
Discussion about this post