রোহিঙ্গা সংকট ও ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সোমবার ও মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে আলোচনা হতে পারে। রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) কয়েকজন সংসদ সদস্য এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্বে থাকা ডেপুটি স্পিকার তাদের এ বিষয়ে ১৪৭ বিধির আলোকে নোটিশ দেওয়ার কথা বলেন। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, নোটিশ পেলে এসব বিষয়ে আলোচনা করে একটি রেজ্যুলেশন গ্রহণ করা যেতে পারে।
রবিবার সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুটি তোলেন। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বের বিবেক নিস্তব্ধ কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের বিবেক জাগ্রত। এক ধরনের পশু শ্রেণির মানুষের তাণ্ডবে আমরা হতবাক। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে অনেক মুসলমান বাস করে। সেখানে তাদের ওপর বার বার আক্রমণ করা হচ্ছে।’ এ সময় তিনি বিষয়টি নিয়ে আরও কথা বলতে চাইলে ডেপুটি স্পিকার তাকে থামিয়ে দেন। রুস্তম আলী ফরাজীকে উদ্দেশ করে ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আপনি বলেছেন বাংলাদেশের মানুষের বিবেক জাগ্রত। আপনি জাগ্রত মানুষের পক্ষে যদি বিধি অনুযায়ী একটি নোটিশ দেন তাহলে বিধিসম্মতভাবে সেই নোটিশ গৃহীত হবে। সংসদে একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হবে। যেটার ওপর একটি রেজ্যুলেশন গ্রহণ করা যেতে পারে। অন্যথায় পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে কথা বলে কালক্ষেপণ করার কোনও অর্থ আছে বলে আমি মনে করি না।’ ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আমি বিনয়ের সঙ্গে আপনাকে আবারও বলছি আপনি জাগ্রত জনতার পক্ষ থেকে বিধি অনুযায়ী নোটিশ প্রদান করুন। নিশ্চয়ই এটি সহৃদয়তার সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।’
এর পর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব উল আলম সিদ্দিকী পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে কথা বলতে চাইলে তাকেও ডেপুটি স্পিকার থামিয়ে দেন। এই সাংসদের অবস্থানের সঙ্গে একমত পোষণ ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আপনি শঙ্কিত, আমি বিস্মিত। এটি নিয়ে যদি আপনি বিধি অনুযায়ী নোটিশ দেন তাহলে তা নিয়ে এখানে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা হবে। আলোচনার ভিত্তিতে একটি সুন্দর রেজ্যুলেশন এই সংসদ এডাপ্ট করতে পারে। সুপ্রিম এবং সব্রেইন সংসদের যে দায়িত্ব– আমরা রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে তা প্রকাশ করার চেষ্টা করবো।’
পরে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও ফ্লোর নিয়ে বলেন, ‘আমাদের সামনে দুটো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আছে। একটি হলো রোহিঙ্গা সমস্যা। সেই রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আমরা সংসদে বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই। আপনি সঠিকভাবে বলেছেন যে, কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে একটা সাধারণ আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। কারণ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে ইতোমধ্যে ৩ লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বর্তমান সরকার তাদের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রশংসিত হয়েছেন। আর দ্বিতীয় বিষয়টি হলো আমাদের জাতীয় সংসদ সার্বভৌম এবং সুপ্রিম।এ বিষয়টি নিয়েও আমরা আলোচনা করবো।’
স্পিকারকে উদ্দেশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনি সঠিকভাবে বলেছেন- আমরা নোটিশ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দুটির মধ্যে রোহিঙ্গা নিয়ে কালকে (সোমবার) আলোচনা করতে পারি। তার পরদিন (মঙ্গলবার) আমরা একটা সময় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে আলোচনা করতে পারি। সুপ্রিম কোর্ট যে একটা রায় দিয়েছে এবং তার অবজারভেশন দিয়েছে, তা দেশ ও জাতিকে বিস্মিত করেছে, অবাক করেছে। সেই ব্যাপারে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে যথাযথভাবে আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরতে চাই। দুটো বিষয় নিয়ে আমরা সেইভাবে নোটিশ দেবো।’
পরে ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘নিশ্চয় বিধি অনুযায়ী নোটিশ এলে এ বিষয়টি বিবেচনা করে দুটি দিন নির্ধারণ করা হবে। মাননীয় স্পিকার মাননীয় সংসদ নেতার সঙ্গে পরামর্শক্রমে সেই দিন নির্ধারণ করবেন। সেখানে আপনারা যে তালিকা দেবেন সেই তালিকা অনুযায়ী আলোচনা হবে। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। আমি মনে করি এই সংসদ সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
Discussion about this post