অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সংবিধানের যেসব কাটা-ছেঁড়া করা হয়েছিল (পরিবর্তন) সেগুলো বাতিল করে ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার লক্ষ্যেই পঞ্চদশ ও ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) দুপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এই সংশোধনী কার্যকর করতে যে আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন তা এখনো হয়নি। তাই আইন হওয়ার আগেই এ বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে মামলা করার এখনও সময় হয়নি।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিল চেয়ে করা এক রিট আবেদনের ওপর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এসব যুক্তি তুলে ধরেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত রিট আবেদনে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের শুনানি শেষ করেছে।
বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিশেষ বেঞ্চে এই রুলের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল দু’ধরনের যুক্তি তুলে ধরেছেন। এই সংশোধনীর মাধ্যমে একদিকে যেমন সংবিধানকে সামরিক ফরমানের মাধ্যমে করা সংশোধনী থেকে কলঙ্কমুক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে এই সংশোধনী কার্যকর করতে যে আইন প্রণয়ন করতে হবে, তা এখনো সংসদে বিবেচনাধীন রয়েছে। সেই আইন পাস হওয়ার আগেই এ সংক্রান্ত রিট দায়েরের কোনো কারণ নেই।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘শুনানিতে আমরা বলেছি ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণীত হয়েছিল জনগণের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। যার ভিত্তি ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ও এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। অথচ সেই সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়েছিল সামরিক ফরমানের মাধ্যমে, যা সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছিল। সেই কলঙ্ক থেকে সংবিধানকে মুক্ত করার জন্যই পঞ্চদশ ও ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়েছে বলে আমরা উল্লেখ করেছি।
‘অপরদিকে এই সংশোধনী কার্যকর এখনো হয়নি। কারণ এই সংশোধনীর মাধ্যমে কোনো বিচারপতিকে অপসারণ করতে হলে সংসদে সেটি দুই রেজুলেশন আকারে (দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে) পাস হতে হবে। পরে রাষ্ট্রপতি সেই রেজুলেশনের ভিত্তিতে বিচারপতিকে অপসারণে পদক্ষেপ নেবেন। আর সংসদে রেজুলেশন পাস করবে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। সেই তদন্ত কমিটি গঠন সংক্রান্ত বিলটি আইনে পরিণত করতে এখন সংসদের বিবেচনাধীন আছে।’
তিনি বলেন, ‘সেই আইন পাস হলেই কেবল তখন বোঝা যাবে এতে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু আছে কি না। তখন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু আইনে থাকলে মামলার কারণের উদ্ভব ঘটবে। তাই এই আইন পাস হওয়ার আগে মামলা দায়েরের কোনো কারণ নেই। তাই এই আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়।’
গত ৫ নভেম্বর অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট ইমরান কাওসার, অ্যাডভোকেট মাসুম আলীম, অ্যাডভোকেট এখলাসউদ্দিন ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট মো. সারওয়ার আহাদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মাহবুবুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম বাবুল, অ্যাডভোকেট শাহীন আরা লাইলি ও অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ৈ এ রিট আবেদনটি করেন।
সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাই কোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ।
রিটে মন্ত্রীপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, আইনসচিব ও সংসদ কার্যালয়ের সচিবকে মামলায় বিবাদী করা হয়েছিল।
আদেশের পরে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হওয়ায় এ রিট করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিচারপতিদের অপসারণে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল ছিল। এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। তারপরও সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে এ ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে দেয়া হয়েছে। সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিলের রায়ে ৯৬ অনুচ্ছেদ সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, এ সংশোধনীতে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আদালতকে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে এ সংশোধনী করা হয়েছে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ৩২৭ জন সংসদ সদস্যের বিভক্তি ভোটের মাধ্যমে পাস হয় ষোড়শ সংবিধান সংশোধন বিল-২০১৪। এ বিল পাসের মধ্য দিয়ে বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ২২ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিলে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। এর মাধ্যমে এ সংশোধনীটি আইনে পরিণত হয় এবং সেদিনই গেজেট প্রকাশ করা হয়।
Discussion about this post