নিজস্ব প্রতিবেদক
গতকাল ৯ এপ্রিল বিকেল ৪ টায় সংস্কৃতি বিকাশকেন্দ্র শাহবাগ ঢাকায় আয়োজিত ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানে জাগ্রত বাংলাদেশ ( জে বি ডি ) এর পক্ষ থেকে দেশ ও জনতার স্বার্থে ২১ দফা কর্মসূচি উত্থাপন করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশ বিজয়ের ৫০ বছর অতিক্রম করেছে। ৫০ বছর পূর্বে সাম্য মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার মহান লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিকামী জনতা পাকিস্তানী জান্তা বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে রণাঙ্গণে যুদ্ধে ঝাঁপিছে পরে বিজয় এনে দিয়েছিল।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাঙ্গালির সেই স্বপ্ন অধরা রয়ে গেছে। ক্ষমতা কাঠামোর স্বৈরতান্ত্রিকতা বাংলাদেশের আপামর জনতার গণতন্ত্র, জনঅধিকার ও মানবতা ভূলষ্ঠিত করেছে। ক্ষুধা, দারিদ্র ও অভাবের অতলে দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনাে নিমজ্জিত আর সামান্য কিছু মানুষের হাতে সকল সম্পদ ও ক্ষমতার চাবিকাঠি।
এই বৈষম্যের ফলে দেশের অর্থনীতি দিনে দিনে আরও বেশি দুর্বলতর হচ্ছে, জনগকে পাকাপোক্ত করতে সমাজে ধর্ম আর সাম্প্রদায়িকতাকে আরাে বেশি জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ,বিদেশী নীতিতে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়জিত হচ্ছে।
স্বাস্থ্যখাতকে কোম্পানিগুলাের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে, সেবা খাত সমূহের বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ায় পুলিশ-র্যাবের মত প্রতিষ্ঠিত বাহিনীগুলােও সমালােচনার শিকার হচ্ছে।
বাংলাদেশে দিশাহীন মধ্যবিত্ত মানুষ এখন দুর্দৈব ছুটে চলেছে অমানিশার অমােঘ অন্ধকারের দিকে। সেই অন্ধকারে আলােকশিখা হয়ে সামনে এসেছে জাগ্রত বাংলাদেশ। জনতার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা জাগ্রত বাংলাদেশ এর লক্ষ্য। এ কারণে সংগঠনটির অন্যতম শ্লোগান- আমাদের রাজনীতি ক্ষমতার জন্য নয়, জনতার জন্য।
জনতার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার তাগিদে দেশ ও জনতার স্বার্থে জাগ্রত বাংলাদেশ এর ২১ দফা কর্মসূচি ঘােষিত হলাে।
যে সকল কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য জগ্রত বাংলাদেশ পরবর্তীতে নানারকম কার্যক্রম গ্রহণ করবে ও রাজপথে আন্দোলন করবে, জাগ্রত বাংলাদেশ মনে করে উক্ত ২১ দফার ভিত্তিতে দেশ গড়া সম্ভব হলে দেশ ও দেশের আপামর জনতার জীবনমান পরিবর্তন করা সম্ভব হবে এবং উন্নত, সুখী ও কল্যান রাষ্ট্র বিনির্মাণ সহজ হবে।
দফা সমূহ নিম্নরূপঃ
১। মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে, রাষ্ট্র ও জনজীবনের সর্বস্তরে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
২। সংবিধানের প্রস্তাবনা সংশােধন করে বাঙ্গালী দেশাত্মবাদী চেতনার উৎসমূল হিসেবে ভাষা আন্দোলনের ভূমিকা তথা একুশে ফেব্রুয়ারিকে সন্নিবেশিত করা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাঙালি জাতি রাষ্ট্রের পিতা হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৩। সকল জনগণের খাদ্র, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা এই পাঁচটি মৌলিক চাহিদার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে এবং যাতে করে সকল জনগণ শিক্ষা ও চিকিৎসা বিনা খরচায় সমান সুযােগে পেতে পারে, সে লক্ষ্যে যত দ্রুত কার্যকর সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪। আপাতত সকল দলের অংশগহণে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জনতার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে।
৫।কেন্দ্রে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সে সব অঞ্চলে ও এলাকায় ক্ষুদ-নৃগােষ্ঠীর বসবাস রয়েছে সে সব স্থানীয় সরকার ক্ষুদ্র-নৃগােষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রকে মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৬। সামাজিক ব্যবসার ব্যাপক বিস্তৃস্তির মধ্য দিয়ে তরুণদেরকে উক্ত ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত করণ ও পাঠক্রমে উক্ত ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা অন্তর্ভুক্তকরণ করতে হবে।
৭। নাগরিকদের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা মেটাবার স্বার্থে স্বল্পমূল্যে নিত্য প্রয়ােজনীয় খাদ্য সরবরাহ করতে পরিবার প্রতি রেশন কার্ড চালু করতে হবে এবং সকল সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এর সকল স্তরের কর্মীদেরকে রেশন সুবিধা প্রদান করতে হবে। খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য আমদানির ওপর দেশীয় আমদানিকারকদের সকল কর মওকুফ করতে হবে।
৮।বাংলাদেশের যুদ্ধ অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি, তাদের পরিবারের সদস্য ও উত্তরাধিকারীদের সরকারি আধাসরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের যে কোন পদে প্রবেশে বা নিয়ােগে বিধি-নিষেধ আরােপ করতে হবে। একই সাথে এই সমস্ত ব্যক্তিগণের বাংলাদেশের যে কোনাে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার খর্ব করতেও প্রয়ােজনীয় আইন সংশােধন করতে হবে।
৯।বিচারিক পুলিশিং পদ্ধতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করে বিচারিক ব্যবস্থাকে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে।
১০। সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ সংশােধন করে উচ্চ আদালতের মত একই পদ্ধতিতে অধঃস্তন আদালতসমূহের নূন্যতম ৬ (ছয়) বছর পর্যন্ত আইন পেশার সাথে জড়িত রয়েছেন এমন ব্যক্তিদেরকে বিচারক হিসেবে নিয়ােগ প্রদান করতে হবে। সংবিধান সংক্রান্ত যে কোনাে বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য সাংবিধানিক আদালত প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
১১। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে সরকারি উদ্যোগে প্রত্যেক ইউনিয়নে অন্তত একটি ধান মাড়াই কল ও চাল কল স্থাপন করতে হবে। যেখান থেকে বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে কৃষিজীবীরা ধান, গম মাড়াই ও চাল উৎপাদন করতে পারবে। বিদেশী বীজের প্রসার বন্ধ করে দেশজ বীজের সরবরাহ বাড়াতে হবে এবং সেচ, সার, বীজ ও উহার সাথে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির ওপর ভর্তুকি বাড়াতে হবে।
১২। ওপেন টেন্ডার পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক বাজারের নিয়ম রক্ষায়, ওপেন টেন্ডার থাকবে, যার ফলে রাস্তাঘাট কালভার্ট স্কুল কলেজ, যে কোন সরকারি স্থাপনা তৈরি মেরামত ধ্বংস বা প্রতিস্থাপনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিযুক্ত প্রকৌশলীরা দায়িত্ব পালন করবে। টেন্ডারের মাধ্যমে কন্ট্রাক্টর বা সাৰ কন্ট্রাক্টর নিযুক্ত করে সরকারি কর্ম বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার সুযােগ রহিত করতে হবে।
১৩। একমূখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুটো প্রধান ভাগে বিভক্ত করা হবে। একটি হবে প্রাথমিক শিক্ষা যার মেয়াদ সাকুল্যে (সাত) বছর, অপরটি উচ্চশিক্ষা যার মেয়াদ ৪ (চার) বছর সর্বমােট ১১ বছরের মধ্যে একাডেমিক শিক্ষা সমাপ্ত হবে। বাংলা ইংরেজির মত ভাষা শিক্ষা, ধর্ম, নৈতিকতা চারু ও কারুকলা খেলাধুলা ইতালি পাঠ্যক্রম নিয়মিত পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দিয়ে ছয় মাসের ডিপ্লোমা কোর্স হিসেবে সহশিক্ষা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কারিগরী শিক্ষার প্রসারের মধ্যদিয়ে কারিগরী ও বৈজ্ঞানিক শিক্ষার বিস্তৃতি ঘটাতে হবে।
১৪। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করণ, প্রত্যেক সরকারি হাসপাতালের প্রয়োজনীয় প্রায় সকল ঔষধ বিনামূল্যে সরবরাহকরণ এসেনশিয়াল ড্রাগ লিমিটেডকে ঔষধ উৎপাদনের পরিমান বৃদ্ধিকরন করতে হবে। উপজেলা পর্যন্ত অল্প আইসিইউ সুবিধাসহ ৩০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপন করতে হবে।
১৫। সকল নাগরিকের জন্য একাডেমি শিক্ষার পাশাপাশি অন্য প্রশিক্ষণ ও সেনা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে এবং প্রত্যেক নাগরিককেই কোন না কোন সময় সেনাবাহিনীতে সেবা প্রদান করতে হবে। প্রতিরক্ষা নীতিকে যুগােপযােগী করে জাতীয় নিরাপত্য কাউন্সিল গঠন করতে হবে।
১৬। জনসংখ্যাধিক্য বাংলাদেশে যােগাযােগের ক্ষেত্রে রেল ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সমগ্র বাংলাদেশে প্রত্যেক লােয় আন্ত শহর ও আন্ত জেলা ট্রেন লাইন স্থাপন করে যােগাযােগ বাড়াতে হবে। প্রত্যেক ট্রেনে একটি বগি বিনা পয়সায় নিম্নবিত্তদের জন্য সংযুক্ত থাকতে হবে। পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে। নতুন করে আর কোনাে সাফারি পার্ক নির্মান করা যাবে না। সমগ্র বাংলাদেশ একটি নৌ যােগাযােগের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
১৭। অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে সমুদ্র সম্পলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে ও সমুদ্র সম্পদ নির্ভর অর্থনীতি বিকাশে উপকূলীয় ১৯ টি জেলায় অর্থনৈতিক জোন গড়ে তুলে কার্যকর ও যুগােপযােগী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কর্মঘন্টার ভিত্তিতে সকল সেক্টৱে শ্রমিকের মজুরির ব্যবস্থা করতে হবে।
১৮। সশস্ত্র বাহিনী, শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বাস্থ্য খাত ব্যতিত বেসামরিক প্রশাসনে নিয়ােগের ক্ষেত্রে spoils systern অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ যােগ্যতা ও দক্ষতা অনুসারে দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের সরকারি সেবা প্রদানের দ্বায়িত্ব প্রদান করা হবে। সরকার গঠনের সাথে সাথে সরকার দলীয় ব্যক্তিগন সচিব থেকে পিওন পষন্ত যােগ্যতা অনুসারে পদ গ্রহণ করবেন। বেসামরিক প্রশাসনে নিয়ােগের স্বাভাবিক পদ্ধতি থেকে ধাপে ধাপে সরে আসতে হবে।
১৯। সংসদে আসন বিন্যাসের ক্ষেত্রে এম কর্ম ও পেশার প্রতিনিধিদের প্রাধান্য দিতে হবে। অংশীদারিত্বের গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি অংশীজনদের প্রতিনিধিত্ব ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে রীয় প্রতিষ্ঠান, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমূহের কাঠামােগত সংস্কার করতে হবে।
২০। প্রতিবেশি রাষ্ট্রসমূহ সহ বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে সম্মানজনক ও কৌশলগত কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। বৈদেশিক সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিবেশি প্রথম’ বা ‘Neighbour First’ নীতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কূটনৈতিক তৎপরতার ক্ষেত্রে স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ও বাঙালিত্বের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।
২১। বাঙালী সংস্কৃতি চর্চা ও বিকাশে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সারাবিশ্বে বসবাসরত বাঙালিদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও বাঙালি সংস্কৃতির অথারিটি হবে বাংলাদেশ। উত্তোরম্ভের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মধ্যদিয়ে সকল নাগরিকদের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
দেশ ও জনতার স্বার্থে ২১ দফা কর্মসূচির ভেতরে ও বাইরে যদি কোন সংশোধনীর প্রয়োজন পড়ে সেটি জাগ্রত বাংলাদেশ পরিবর্তন ও সংযোজন বিয়োজন করতে পারবেন এবম সাধারণ জনতার প্রয়োজনের যে কোন সুপরামর্শ জাগ্রত বাংলাদেশ স্বাদরে গ্রহণ করবে। জাগ্রত বাংলাদেশ “জয় হোক জনতার, জয় হোক বাংলার”
Discussion about this post