সন্তানদের আদর্শ হব বলে চুয়াল্লিশেও খেলে যাচ্ছি

16
VIEWS

brad-hogg-kkrবিডি ল নিউজঃ কুলদীপ যাদব, সূর্যকুমারদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে মাঝেমধ্যে তাঁর মনে হয় সতীর্থ কোথায়, এ তো নিজের বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলছি! মনে হয়, এরা নিশ্চয়ই নিজেদের রুমে গিয়ে হাসাহাসি করবে আমার বয়স নিয়ে। ভাববে, লোকটার বয়স কত রে বাবা! জোকার। প্র্যাঙ্কস্টার। শোম্যান। পিতৃদত্ত নামের বাইরে এমন অনেক নাম তাঁর আছে, জানেন। জানেন, তাঁর অফুরান এনার্জি দেখে লোকে ভাবে, এ কি ব্যাটারি গিলে মাঠে নামে? এটাও শুনেছেন, সবাই তাঁর ইয়ার্কি-ঠাট্টা পছন্দ করে না। রাগও করে কেউ কেউ। ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেয়, তুমি এ বার বিদায় নিলে ভাল!

শেন ওয়ার্নকে এতটুকু হিংসে করেন না। জ্বলুনি হয় না ওয়ার্নের অন্তহীন খ্যাতির আকাশ দেখে। সে যতই নিন্দুকেরা বলুক, ওয়ার্ন না থাকলে তবেই হগ। কখনও ভাবেন না কয়েকটা বছর পর জন্মালে ওয়ার্ন বা স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের সঙ্গে পাল্লা দিতে হত না। বরং মনে হয় জীবন যা দিয়েছে, এখনও যা দিচ্ছে, যথেষ্ট। যা সাফল্য আসছে, সেটা তখনই চূড়ান্ত উপভোগ করে নেওয়া ভাল। কে জানে, ভবিতব্য ক্রিকেট বলটা আর হাতে তুলে দেবে কি না!

জর্জ ব্র্যাডলি হগ এখন কোনও কিছুই গায়ে মাখেন না। কেউ কেউ তাঁকে নিয়ে বিরক্ত হলেও মনে মনে ঠিক করেন, আমি থাকব একই রকম। পঁচিশ বছরের ছেলের পেছনেও এমন লাগব যে, দম বেরিয়ে যাবে। গৌতম গম্ভীরকে সবাই গম্ভীর বলে। আমি ওকেও হাসাব। বড় বড় টিমে মানুষের নেগেটিভ চিন্তাভাবনা দেখে এক সময় খারাপ লাগত। এখন মনে হয় ও সব ভাবব না, নিজে পজিটিভ থাকব।

ক্রিকেটটা যে খেলতে হবে! চুয়াল্লিশেও খেলতে হবে সন্তানদের মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে। ওদের সেরা হতে বলার আগে নিজেরও তো সেরা হওয়া দরকার।

বাইপাসের ধারের টিম হোটেলে কেকেআরের যে চায়নাম্যানকে পাওয়া গেল, তাঁকে দেখলে মনে হবে না ইনি একমাত্রিক। মনে হবে একই সঙ্গে দু’জন ব্র্যাড হগ বসে আছেন। একজন অত্যন্ত খোলামেলা। চব্বিশ ঘণ্টায় পারলে তেইশ ঘণ্টা ইয়ার্কি মারবেন। হাসাতে হাসাতে সতীর্থদের এমন অবস্থা করবেন যে, তাঁরা ব্র্যাড-প্রসঙ্গ উঠতেই হেসে গড়িয়ে পড়বেন। দ্বিতীয় জন ঠিক উল্টো। সে তেতাল্লিশে বিগ ব্যাশে আচমকা ডাক পেয়ে অঝোরে কেঁদে ফেলে। নিজের সাফল্যে নিজেই অবাক হয়ে যায়। বিশ্বাস করতে অসুবিধে হয়, তা হলে আজও আমি পারি! ‘‘ট্রেভর (বেলিস) আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল আইপিএল নিলামে নাম দেব কি না? তখন তো আমার বিগ ব্যাশ খেলা নিয়েই সন্দেহ ছিল। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটের জন্য প্রথম ম্যাচে খেলতে পারিনি। কেরিয়ারটা কোথায় যাচ্ছে সেটাই জানতাম না,’’ টিম হোটেলের কফিশপে বসে আনন্দবাজারকে বলছিলেন ব্র্যাড। আইপিএল আটে কেকেআরের হয়ে তিন ম্যাচে যাঁর ছ’উইকেট হয়ে গেল এবং সুনীল নারিনের অভাব এখনও যিনি বুঝতে দিচ্ছেন না। নারিনের অফস্পিন নিয়ে রিপোর্ট রবিবারও পড়ল না। যার মানে সোমবার ইডেনে হায়দরাবাদ ম্যাচেও তিনি অনিশ্চিত। আর ডেভিড ওয়ার্নারদের আটকানোর দায়িত্ব অনেকটাই সেই হগের উপর।

ওয়ার্নার, শিখর ধবন, ইয়ন মর্গ্যান— সানরাইজার্সের তিন বাঁ-হাতি নিয়ে স্ট্র্যাটেজি কিছু ভেবেছেন? ‘‘আরে সেটা এখনই বলে দেব না কি?’’ স্বভাবসিদ্ধ হাসতে থাকেন হগ। ‘‘মনে হচ্ছে কাল বেশি টার্ন পাব। টুর্নামেন্ট যত এগোবে উইকেট তত পুরনো হবে। আশা করছি পীযূষ আর আমি কাল ওদের কাঁপিয়ে দেব।’’ অবাক লাগবে এমন সরল আত্মবিশ্বাসের উৎস খুঁজতে গেলে। সেখানে হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট-ত্যাগের যন্ত্রণা, বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তানদের চোখে মহানায়ক হওয়ার ইচ্ছে।

‘‘পারিবারিক কারণে ২০০৮-এ ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছিলাম। ওই সময় ডিভোর্সও হয়ে গেল। কিন্তু ক্রিকেট ছাড়লেও স্বপ্ন ছাড়িনি,’’ বলে ফের সংযোজন, ‘‘বরং শিখেছি, স্বপ্ন দেখলে সেটাকে তাড়া করো। এই যে আইপিএল খেলছি বলে বাচ্চাদের থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে, ওদের মিস করছি। কিন্তু আমি চাই আমার সন্তান সব সময় সেরার জন্য ঝাঁপাক। ওরা যদি দেখে বাবা-মা সেটা করছে না, তা হলে ওরা কী শিখবে? আমিই বা ওদের রোল মডেল কী ভাবে হব?’’

দমদম বিমানবন্দরে সস্ত্রীক নারিন।

তাই বলে চুয়াল্লিশেও ক্রিকেট? জুনিয়র-বোঝাই টিমের সঙ্গে মিশতেই তো সময় বেরিয়ে যাবে। ‘‘হ্যাঁ মনে হয় টিমমেট নয়, নিজের বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলছি। কিন্তু খেলায় প্যাশনটাই আসল। ওটা আঠারোয় যা, নব্বইয়েও তাই। খুব অসুবিধে হয় না। সানি (নারিন), কুলদীপদের সঙ্গে কথা বলি। স্পিনাররা আলাদা করে বসি। কুলদীপের থেকেও কত কিছু শিখছি। বয়সটা তো আমার মাত্র চুয়াল্লিশ! তবে কুলদীপ আমার থেকে যত কম শেখে, তত ভাল!’’ বলে হাসিতে ফেটে পড়েন ব্র্যাড। ঠিক এক রকম উল্লসিত তাঁকে দেখায় সতীর্থের পিছনে লাগার উদাহরণ চাইলে। চোখ নাচিয়ে বলে দেন, ‘‘ওটা কাউকে বলা যাবে না। তা হলে ওর নামটা বেরিয়ে পড়বে আর ও এসে আমাকে ধরবে! তবে ওরা বলছে আমার স্ত্রী আজ এসে যাবে, তাই ওরা নাকি আমার হাত থেকে বেঁচে যাবে। জানে তো না, আমার বউ আমারই মতো!’’

আবার একই লোককে বলতে শোনা যায়, আইপিএল না থাকলে প্রত্যাবর্তন সম্ভবই হত না। অন্ধকারে বসে আফসোস করতে হত দুটো বছর নষ্ট করা নিয়ে। ওয়ার্নদের দেখে যখন মনে হত, নিজেকে নিজে নষ্ট করছি। কোনটা তা হলে সত্যি? ফুরফুরে, জীবনকে সহজে নেওয়া হগ? না কি দ্বিতীয় জন? চুয়াল্লিশেও যে যুদ্ধের বর্ম খুলে রাখে না? জানা যতটা কঠিন, একটা জিনিস বলে দেওয়া ততটাই সহজ।

জর্জ ব্র্যাডলি হগ স্পিনারের বিরল প্রজাতি শুধু নন। বিরল মানুষও বটে।

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

রাজস্থানকে জেতালেন রাহানে, মুম্বইকে সিমন্স
নিজস্ব প্রতিবেদন
ব্যাট হাতে দুরন্ত ফর্মে লেন্ডল সিমন্স ও অজিঙ্ক রাহানে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবং রাজস্থান রয়্যালস রবিবার যে জয় পেল, তার পিছনে অবদান এই দু’জনের। ভাল করে বললে, এঁদের বড় রানের। ঘরের মাঠেও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে জিততে পারল না প্রীতি জিন্টার কিঙ্গস ইলেভেন পঞ্জাব। রবিবার মোহালিতে লেন্ডল সিমন্সের দাপুটে ব্যাটিংয়ের সৌজন্যে ২৩ রানে হারলেন ম্যাক্সওয়েল, ঋদ্ধিমানরা। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ৫৬ বলে ঝোড়ো ৭১ রান করে যান সিমন্স। ওপেনিংয়ে সিমন্সকে যোগ্য সঙ্গত করেন প্রাক্তন ভারতীয় কিপার পার্থিব পটেল (৩৬ বলে ৫৯)। যার সুবাদে তিন উইকেটে ১৭২ রানে শেষ হয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ইনিংস। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে কিঙ্গসরা। শুরুতেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান সহবাগ (২), ম্যাক্সওয়েল (১২)। হরভজন, মালিঙ্গাদের আঁটোসাঁটো বোলিংয়ের সামনে ডেভিড মিলার (৪৩) ছাড়া পঞ্জাবের কেউ সে ভাবে দাঁড়াতে পারেননি। অন্য ম্যাচে, রাজস্থান রয়্যালস আবার দিল্লি ডেয়ারডেভিলসকে হারাল ১৪ রানে। নেপথ্যে— অজিঙ্ক রাহানের দুরন্ত ৯১ (৫৪ বলে) রান। সঙ্গে করুণ নায়ারের ৬১। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শেন ওয়াটসনের টিম তোলে ১৮৯-২। ব্যাট করতে নেমে দিল্লির শ্রেয়স আয়ার (৯), যুবরাজ সিংহরা (২২) বড় রান না পেলেও পাল্টা লড়াই শুরু করেছিলেন দুমিনি (৫৬)। কিন্তু জেমস ফকনারের হাতে ধবল কুলকার্নির হাতে দুমিনি ধরা পড়লে চ্যালেঞ্জ শেষ হয়ে যায় দিল্লির। শেষ পর্যন্ত সাত উইকেট হারিয়ে তাদের ইনিংস শেষ হয়ে যায় ১৭৫ রানে।

সৌজন্যে আনন্দবাজার পত্রিকা

Next Post

Discussion about this post

নিউজ আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.