দীর্ঘ ৩৮ দিন পর ঘরের বাইরে বের হলেন আলোচিত এসপি বাবুল আক্তার। বুধবার (৩ আগস্ট) হঠাৎ করেই পুলিশ সদরদপ্তরে যান তিনি। প্রায় এক ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করার পর দুপুর ২টার দিকে বেরিয়ে যান তিনি।
তবে রাত ৯টার দিকে বাবুল আক্তার বাসায় ফিরেন বলে জানান তার শ্বশুর মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাবুল হেডকোয়ার্টার থেকে ২টার দিকেই বের হয়েছে। এরপর ব্যক্তিগত কিছু কাজ সেড়ে ছেলে মেয়েদের জন্য কেনাকাটা করে বাসায় ফিরেছে।’
স্ত্রী খুন হওয়ার পর শ্বশুর বাড়িতে দুই সন্তান আক্তার মাহমুদা মাহির (৮) ও তাবাসসুম তাজমিন টাপুরকে (৫) নিয়েই সময় কাটছে বাবুলের।
কিন্তু এর আগে বাবুল আক্তার পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘণ্টা দুয়েক পর তার শ্বশুর বলেন, ‘বাবুল সকাল ১০টার দিকে পুলিশ সদর দপ্তরে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছে। বেলা ১টার কিছু পরে সদর দপ্তর থেকে একবার ফোনও করেছিল। কিন্তু এরপর আর তার সাঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি।’
তিনি কোথায় যেতে পারেন- এমন প্রশ্নে মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সেটাতো আমি বলতে পারবো না। তারতো ঢাকা শহরে আত্মীয়ের অভাব নেই। হয়তো কারো বাসায় বেড়াতে যেতে পারে।’ রাত সাড়ে ৮টার দিকে খিলগাঁও মেরাদিয়া বাবুল আক্তারের শ্বশুর বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা যায়। তবে জামাই বাসায় না ফেরাতেও শ্বশুরের মধ্যে কোনো উৎকণ্ঠা দেখা যায়নি। বেশ খুশি খুশিই মনে হচ্ছিল।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বুধবার প্রধান ফটকের রেজিস্টার খাতায় স্বাক্ষর করে ১টা ১৩ মিনিটে ভেতরে প্রবেশ করেন বাবুল আক্তার। এরপর তিনি প্রথমে আইজিপির দপ্তরে যান। সেখানে প্রায় ১৫ মিনিটের মতো ছিলেন। এরপর সোজা চলে যান সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন) হাবীবুর রহমানের দপ্তরে। সেখানেও মিনিট বিশেক ছিলেন। এরপর বেশ কয়েক জন সিনিয়র কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করে ২টা ১০ মিনিটে হেঁটে পুলিশ সদর দপ্তর ত্যাগ করেন।
এদিকে ৩৮ দিন পর এসপি বাবুল আক্তারের পুলিশ সদর দপ্তরে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে চারিদিকে বেশ গুঞ্জন শুরু হয়। অনেককে বলতে শোনা যায়, ওপর মহলের সবুজ সংকেত পেয়ে চাকরিতে যোগদানের জন্যই তিনি সদর দপ্তরে এসেছেন। আবার এমনও শোনা যায়, গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে বাবুল আক্তারকে সদর দপ্তরে তলব করা হয়েছিল।
স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার দিনই (৫ জুন) সদর দপ্তরে সংযুক্ত হন এসপি বাবুল আক্তার। এরপর গত ২৫ জুন তাকে ঢাকার শ্বশুরবাড়ি থেকে মধ্যরাতে ডেকে নিয়ে টানা ১৫ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয় ডিবি কার্যালয়ে। পরে বাসায় পৌঁছে দেয়া হলেও পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত এসপি বাবুল আক্তার আর স্বপদে যোগদান করেননি।
এরপর গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছিল, বাবুল আক্তার চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন ওই দিন রাতেই। তবে এনিয়ে নানা খবর বের হলেও সরকার কিংবা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সুষ্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি এ নিয়ে মুখ খোলেননি বাবুল আক্তার নিজেও।
গত ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি’র মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত ও গুলিতে খুন হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনার পরদিন পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে একটি হত্যামামলা দায়ের করেন।
ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিআই)। তবে মামলার মূল তদন্তে আছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততা প্রথমেই উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। এরপর নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। বাবুল আক্তারেই স্ত্রী হত্যায় জড়িত এমন গুঞ্জনও চলে। তবে এখনো পর্যন্ত আসামিদের দেয়া স্বীকারোক্তি কিংবা পুলিশের পক্ষ থেকে বাবুল আক্তারই এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সেই রকম কোনও কিছু বলা হয়নি।সুত্র বাংলামেইল
Discussion about this post