সাঈদ চৌধুরী: গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখলাম রিকশাচালক এক বৃদ্ধের আর্তি । খুব চেষ্টা করে একজনকে রিকশায় ওঠালো । বৃদ্ধজন দাম কষাকষির সময় বার বার বলছিলো ‘বাবারে দু একটা টাকা বেশী আপনারা না দিলে সাত ছেলেমেয়ের সংসার চালাইমু কেমতে ! ‘ আমি দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই বৃদ্ধ মানুষটি যাত্রী গন্তব্যে নামিয়ে আবার ফিরে আসে । আমি তাকে জিজ্ঞেস করি তার বাড়ি কোথায় ? সে উত্তর দেয় কোন বাড়ি নেই, ভেঙ্গে গেছে নদীর গহীণে । পদ্মার অতল তলে থাকার জায়গা চলে গেছে শুনে যতটা অবাক হইনি তার চেয়ে অবাক হয়েছি তার করুণ কান্নায় ! যেদিন ঘর ভাঙতে শুরু করেছিলো সেদিনই দেয়াল চাপা পড়ে মারা যায় তার স্ত্রীও । ইসলামে ভিক্ষে করা নিন্দার কাজ বলে সে এই আশি বছর বয়সে বেছে নিয়েছে রিকশা চালানোর মত কাজ । প্রতিদিন যে টাকা উপার্জন করে তা দিয়ে এক কেজী চাল আর তরকারি কেনার পর নিজের ঔষধটুকু কেনার সামর্থ থাকেনা । তার কথায় স্পষ্ট ছিলো সাহায্য না পাওয়ারও কষ্ট । সে বলছিলো আগে সাহায্য গেলেও এখন নাকি আর কোন সাহায্যই পৌছায় না তাদের থাকার জায়গাগুলোতে ।
চালের কেজি সত্তর টাকার উপরে । একমাত্র পেঁপে ছাড়া কোন সবজির দামই চল্লিশ টাকার নিচে নেই ! তবে বন্যার্ত এলাকার মানুষ খাচ্ছে কি? আমরা কি তার খোঁজ নিচ্ছি বর্তমানে । রোহিঙ্গা ইস্যুতে যেভাবে বিষয়টি চাপা পড়ে যাচ্ছে তাতে নিজের দেশের মানুষের কাছেই আমরা হয়ে যেতে পারি অপরাধী । রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবন নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে, কাজ করতে হবে তাদের ত্রাণের বিষয়েও কিন্তু তাদের ত্রাণের জন্য সবচেয়ে বেশী কাজ করতে হবে কুটনৈতিকভাবে । যদি আমরা সব ত্রাণ তাদের দিতে থাকি তবে রোহিঙ্গারা এদেশে বসবাসের জন্য একটি উপযোগী স্থান মনে করে স্থায়ী বসবাসের চিন্তা করতে পারে । রোহিঙ্গাদের সব নিরাপত্তা দেখার দায়িত্ব তাদের সরকারের হলেও তারা আমাদের উপর বিষয়টি চাপিয়ে দিয়েছে যা অনৈতিক এবং এটাই বিশ্বকে জানাতে হবে । সবচেয়ে হতাশাকর ব্যপার হল এখনও কোন সংস্থা বা কোন দেশের প্রতিনিধি দল তাদের সাথে বৈঠকও করেনি । তবে কুটনৈতিকভাবে এই রোহিঙ্গাদের ত্রাণের ব্যপারে এখনি পদক্ষেপ নেওয়ার সময় নইলে আন্তর্জাতিকভাবে আমরাই সংকটে পড়বো এক সময় ।
অন্যদিকে বন্যার্ত অসহায় মানুষগুলো চেয়ে আছে ত্রাণের জন্য । বিশেষ করে চরাঞ্চল ও ভাঙ্গনের শিকার যারা তাদের অবস্থা আরও বেশী খারাপ । আমাদের দেশের এই গরীব দুঃখী মানুষগুলোর জন্যও ত্রাণ বেশী করে প্রয়োজন । সরকারি ও বেসরকারি সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান বন্যার্ত মানুষগুলোর কথাও ভাবুন । সরকারের কাছে বিনীত নিবেদন বন্যার্ত ও রোহিঙ্গা বিষয়টি নিয়ে একটি কাঠামো পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যান নইলে যে কোন বড় ধরনের অর্থনৈতিক বা মানবিক সংকটের মুখোমুখি আমরা হতে পারি ।
Discussion about this post