বিডি ল নিউজঃ সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম জিয়া উভয়ে একে অপরকে রক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছেন। সে হিসেবে খুব দ্রুতই হয়তো এই দফার হরতাল-অবরোধ শেষ হতে যাচ্ছে। এরপর বিএনপি নিজেদের স্বাভাবিক সভা-সমাবেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবে। আর সরকার সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচনের দিকে এগুবে। এই প্রক্রিয়ার আর অল্পই বাকি আছে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। সম্প্রতি কূটনীতিকদের দেয়া প্রস্তাবে খালেদার সাড়া দেয়াটা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন এ মোড় এনে দিল।
সূত্র জানায়, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করতে কূটনীতিকরা শেখ হাসিনা সরকারের সম্মতিতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সময় তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন। এগুলো ছিল- ১) শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে সবগুলো দলের সমন্বয়ে জাতীয় সরকারের অধীন অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচন, ২) রাষ্ট্রপতির অধীনে সবগুলো দলের সমন্বয়ে ২০১৬ সালের প্রথমদিকে জাতীয় সরকারের অধীন অন্তর্বর্তীকালীন নির্বাচন, ৩) জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে সংলাপ শুরুর নিশ্চয়তা। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দ্বিতীয় প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছেন বলে ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো প্রতিক্রিয়া তারা জানাতে পারেননি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কূটনীতিকরা যেহেতু সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রস্তাবগুলো দাঁড় করিয়েছে, সেহেতু এর মধ্যে বিরোধীরা সরকারি অভীপ্সার ইঙ্গিত পাওয়াটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া দুই দলের নেতাদের বক্তব্যই পারস্পরিক সন্দেহের বীজকে শক্তিশালি করছে। সরকার ২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতির অধীনে নির্বাচনের প্রস্তাবে সাঁয় দিলেও আদতে সরকারি দলের নেতারা ধারাবাহিকভাবে ‘২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন নয়’ বলে জোর বক্তব্য প্রচার করে চলেছেন। সরকারি দলের নেতাদের এই বক্তব্য ও আচরণ নির্দেশ করে যে, আসলে ২০১৬ সালে নির্বাচনের কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। এ থেকে বোঝা যায় যে, এটা আসলে এক ধরনের পিঠরক্ষার প্রস্তাব। যার মধ্য দিয়ে বর্তমান অচলাবস্থাকে কিছুদিনের জন্য হলেও ঠেকিয়ে রাখা যায়। আওয়ামী লীগ মনে করে, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে আগামী এক বছর ঠিকঠাক এগিয়ে নেয়া গেলে তখন আর বিএনপির আন্দোলন জনগণের কাছে তেমন পাত্তা পাবে না।
অন্যদিকে বিএনপিও বেশ ভালো করেই জানে যে, সরকার একা একাই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করেছিল। তাদের চরিত্রের এমন কোনো পরিবর্তন ঘতেনি যে, এখন তারা নিজেদের বদলে ফেলবে। বরং তারা শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াও মুশকিল। কর্মী ও নেতাদের অধিকাংশই জেলে। সরকারের প্রতি সমর্থন না থাকলেও অগ্নিসংযোগ, পেট্রোল বোমা ও ককটেলের কারণে আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের কোনো যোগসূত্র গড়ে ওঠেনি। বরং সরকার ও গণমাধ্যমের অব্যাহত প্রোপাগান্ডার ফলে পরিস্থিতি বিএনপি নেত্রীর হাতের বাইরেই। এছাড়া যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হওয়া এবং জোরপূর্বক চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠিয়ে দেয়ার সরকারের শেষ পরিকল্পনা সম্পর্কেও খালেদা ওয়াকিবহাল। ফলে আন্দোলনের এই স্তরে কিছুটা গোছানোর সুযোগ পেলে, তা কাজে দেবে বলে মনে করছে বিএনপির নেতৃস্থানীয়রা।
দুই দলের পিঠরক্ষার এই চিন্তা মানুষের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তিকর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খালেদা যে প্রস্তাবটি গ্রহণ করলেন রাজনৈতিক দিক দিয়ে তা তাদের উভয়ের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে দুই পক্ষই পরিকল্পনা এগুনো এবং ঘর গোছানোর সুযোগ পাবেন। তবে বল এখন শেখ হাসিনার কোর্টে। তার দলের বিশেষ কোনো পরিকল্পনা না থাকলে দেশের সকলের জন্যই একটা ভালো খবর অপেক্ষা করছে। প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক অবস্থান নিলে দ্রুতই অচলাবস্থা দূর হবে। এই দফার টানা অবরোধ শেষ হতে পারে আগামী সপ্তাহেই। এরপর বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দেবে সরকার। বিপরীতে শুরু হবে সংলাপ ও নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ক আলোচনা। তবে সংলাপ যদি সমাধানের দিকে না এগোয়, তাহলে আগামী ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে আবারো পরিস্থিতি এ ধরনের চেহারার দিকে মোড় নিতে পারে।
সূত্রঃ ইউরো বিডি
Discussion about this post