সাইফুর’স কোচিং সেন্টারের দেয়া বিজ্ঞাপনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘সাইফুর’স নামের এক চোর আছে। সে নাকি আগে টিচার ছিল। এখন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চুরি শেখানোর জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। অভিভাবকদেরও টাকা হয়েছে। তারাও সেখানে গিয়ে টাকা ঢালছেন।
রোববার ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সাহিত্যপাঠ, বাংলা সহপাঠ ও ইংলিশ ফর টুডে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমেরিকান ফেডারেল ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের টাকা চুরি যাওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য আমরা ওখানে টাকা রেখেছি। কিন্তু হ্যাকার কি চাবি নিয়ে গেছে? চেক বই নিয়ে গেছে? নাকি হাতুড়ি দিয়ে লকার ভেঙেছে? তারা মাথা খাটাইয়া ওখান থেকে কেমনে কেমনে টাকা নিয়া গেছে। আমাদের বিভ্রান্ত করার জন্য সেই টাকা কয়েকটি ক্যাসিনো ঘুরাইয়া নিয়া গেছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বমানের জ্ঞান, প্রযুক্তি শিক্ষার পাশপাশি আমাদের ছেলে-মেয়েদের প্রকৃত মানুষ হতে হবে। আমরা সততা, নিষ্ঠা, জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত পরিপূর্ণ মানুষ তৈরি করতে চাই। শুধু জ্ঞান দিয়ে মাথা ভর্তি করলেই হবে না। এটা বিপজ্জনকও হতে পারে। যদি সে খারাপ কাজ করে।’
তিনি বলেন, ‘সে যদি চোর হয়, তাকে জ্ঞান শেখালে সে তো চুরি করবে। আমাদের দেশেও এগুলো করার চেষ্টা হচ্ছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।’
এসময় তিনি বলেন, ‘সাইফুরস নামে এক চোর আছে। আগে টিচার ছিল। সে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিছে যে, ইংরেজি ভালো না জানলে পাস করতে পারবা না। ‘ই’ আর ‘এ’ এর মধ্যে পার্থক্য ধরতে না পারার কারণে হ্যাকাররা সব টাকা চুরি করতে পারেনি। কারণ, তারা ইংরেজিতে দক্ষ ছিল না। এ জন্য ভালো শিক্ষক, ভালো ডাক্তার, ভালো বৈজ্ঞানিক, এমন কী ভালো হ্যাকার হতে গেলেও ভালো ইংরেজি জানতে হবে। সেজন্য সাইফুরসে এসে ভালো ইংরেজি শিখতে হবে।’
তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘হ্যাকার হওয়ার জন্যও বিজ্ঞাপন দেয়! পারতো দুনিয়ার অন্যকোনো দেশে এ রকম বিজ্ঞাপন দিতে? একটা মানুষও প্রতিবাদ করলো না! আমি এতো চিল্লাইলাম। কিন্তু একটা মানুষও আর কিছু বললো না। আমার চিল্লানির একমাস/দুমাস পর দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) তার কাছে (সাইফুরসে) চিঠি পাঠাইছে।’
পাঠ্যপুস্তক বিতরণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত অভিভাবকদের উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বাবা-মা’দেরও অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বেড়েছে। আপনারাও টাকা নিয়ে ঢালছেন।’
অভিভাবকদের উদ্দেশে মন্ত্রী আরো বলেন, ‘শিক্ষকদের বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছে। আপনারা শিক্ষকদের বলেন, পড়াও আমাদের ছেলে-মেয়েকে। বাড়িতে বা কোচিংয়ে গিয়ে কেন পড়বে শিক্ষার্থীরা। ক্লাসে ভালো করে পড়াও। ক্লাসে পড়বে। বাকি সময় খেলাধূলা করবে। ঘুরা-ঘুরি করবে। অনেক কিছু শিখবে।’
প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘এ ধরনের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যদি আপনারা রুখে না দাঁড়ান তাহলে কীভাবে পাহারা দিব বলেন? আমরা আছি, তবে শুধু আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আপনাদেরও সহযোগিতা করতে হবে। সবার সহযোগিতায় এসব বন্ধ করা সম্ভব।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা। বিশেষ অতিথি ছিলেন- ভারপ্রাপ্ত শিক্ষাসচিব এসএম মাহমুদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ড. ওয়াহিদুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য দেন এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) ড. রতন সিদ্দিকী।
Discussion about this post