চট্টগ্রাম আদালতের একটি ১৯৯২ সালে ফৌজদারি মামলার সাক্ষি হাজির করার জন্য থানার ওসি’কে সমন জারির আদেশ দেন আদালত। সাক্ষির অপেক্ষায় ওই মামলায় ১৪০টি তারিখ নির্ধারিত হয়। তবে তারিখের পর তারিখ গেলেও সাক্ষি হাজির করতে পারেনি পুলিশ।<br /> একইভাবে পটিয়া থানার অপর একটি মামলায় একজন সাক্ষিকে হাজির করার জন্য ২০টি জামিন ও অজামিনযোগ্য সমন জারি করে আদালত। এরপরও ওই সাক্ষিকে হাজির করতে পারেনি পুলিশ। বছরের পর বছর আদালতে সাক্ষি হাজির করতে না পারায় চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি থানায় পড়ে আছে ৩৭ হাজার ৮৩৮টি সমন। তবে এরমধ্যে সব চেয়ে বেশী ১৮ হাজার ৬৪৬টি সাক্ষির সমনসহ ৮২টি আদেশনামা পড়ে আছে পটিয়া থানায়। চট্টগ্রামের দায়রা আদালতে ২০০০ সালের পূর্বের ৩৩৪টি অধিক পুরাতন মামলাসহ বিচারাধীন মামলায় পুলিশ সাক্ষি হাজির করতে না পারায় দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারছে না নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরুল হুদা।</p> গত বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজের সম্মেলন কক্ষে ‘পুরাতন ফৌজদারি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি: প্রতিবন্ধকতা ও নিরসনের উপায়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ এ নির্দেশ দেন।<br /> সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, জেলার আদালতসমূহের বিচারাধীন মামলার সাক্ষিদের সমন জম জমতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে। এমুহুর্তে কার্যকর কোন ব্যবস’া না নিলে উদ্ভুত সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে না। সাক্ষিদের হাজির করা পুলিশের দায়িত্ব।<br /> তিনি উপসি’ত পুলিশ সুপার হাফিজ আক্তারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাক্ষিদের সমন জারি করতে পুলিশ দায়িত্ব পালন বিষয়টি তদারকি করার জন্য অনুরোধ করেন।<br /> বিচারাধীন মামলায় সাক্ষি হাজির করতে না পারায় জেলার থানা সমুহে পড়ে থাকা সমনের পরিমাণকে ভয়াবহ উল্লেখ করে জেলার পুলিশ সুপার হাফিজ আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, এতো দিন বুঝে বা না বুঝে সাক্ষি হাজির করার বিষয়টি তদারকি করেছি। সভায় এসে বুঝতে পারছি একাজটি সঠিকভাবে করতে না পারায় কি ধরনের জঠিলতা সৃষ্টি হয়েছে।<br /> সাক্ষির সমনের পরিমাণ নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেন, সাক্ষি হাজির করার বিষয়ে আদালত-পুলিশ-আইন কর্মকর্তারা সকলে আন্তরিক হয়ে এক যোগে কাজ করলে দ্রুত সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে।<br /> সাক্ষিদের প্রতি জারি করা অজামিনযোগ্য সমনের বিষয়ে চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম মুন্সি মো. মশিয়ার রহমান তার বক্তব্য বলেন, এক্ষেত্রে সাক্ষিকে গ্রেফতার করে মামলার তারিখে আদালতে হাজির করতে হবে এমন কোন বিধান নেয়। যখনই পাওয়া যাবে, তাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করতে হবে। আদালত প্রয়োজনে তাকে জামিনে মুক্তি দেবে বা কারাগারে পাঠাবে বা সাক্ষ্যগ্রহণ করে মুক্তি দিবে।<br /> এছাড়াও সাক্ষিকে পাওয়া না গেলেও আইনে উল্লেখিত পদ্ধতিতে তার বসতঘরে দুইজন স’ানীয় সাক্ষির উপসি’তিতে লটকিয়ে অথবা তার পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক কোন ব্যক্তির উপর জারি করে অথবা কোন কারণে জারি করা না গেলে সমনে উল্লেখিত তারিখে আদালতকে লিখিতভাবে জানাতে হবে বলেও জানান তিনি।<br /> সভায় উপসি’ত বিভিন্ন থানার ওসি, সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ও বিচারকগণ উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় জানানো হয়, ২০১৫ সালে জেলা ও দায়রা জজ মো. নুরুল হুদা যোগদানের পর জজশীপের অধীনে ২০১৪ সালে ৩৩,০৫৬টি সাক্ষির প্রতি সমন জারি করা হলেও ২০১৫ সালে জারি হয় ৬৭,৪৮৪টি সমন। একইভাবে ২০১৫ সালে দীর্ঘ পুরাতন দেওয়ানী ৫৯৩টি মামলাসহ মোট ৩১,০১৪টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যেখানে ২০১৪ সালে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ১২,৩৪৩টি। এছাড়াও ২০১৪ সালে আদালতসমূহের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪,২৫,৬২,৯২৯ টাকা এবং ২০১৫ সালে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫,৪০,৭৭,০৪৬ টাকা। বিচারাধীন দীর্ঘ পুরাতন মামলার কেস ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট গ্রহণ করে এ সাফল্য পেয়েছেন বলেও সভায় জানানো হয়।</p> জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজগণ, চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান, জেলা সরকারি কৌঁসুলি এ কে এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার, জেলা কোর্ট পরিদর্শক এ এইচ এম মশিউর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপারেরা, জেলার ১৬ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ও জেলার বিভিন্ন আদালতের বেঞ্চ সহকারীরা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভাটি পরিচালনা করেন সপ্তম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ ফেরদৌস আরা।</p>
Discussion about this post