সাবেক প্রধান বিচারপতি ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমানের জানাযা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৬ জুন) বেলা পৌনে ২টার দিকে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাযা শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান অত্যন্ত ভাল লোক ছিলেন। আমি প্রধান বিচারপতি ছাড়াও আইনজীবী হিসেবেও তাকে পেয়েছি। তিনি সবসময় হাসিখুশি ছিলেন। তিনি আমাদের অভিভাবক ছিলেন, আমরা সবাই মর্মাহত।
প্রধান বিচারপতি আরও বলে, তিনি এমন অনেক রায় দিয়েছেন, যা আমরা এখনো আমরা অনুসরণ করি। তিনি অতি ভদ্র লোক ছিলেন। আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
জানাযায় সুপ্রিকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিবৃন্দ, সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী, কে এম হাসান, সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন, মো. মোজাম্মেল হোসেন, ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম, এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, তত্ত্বাবধায়ক সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাবেক মন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, এ জে মোহাম্মদ আলী, সুপ্রিমকোর্ট বার সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সম্পাদক এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, এমিরেটাস সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এ জানাযায় অংশ নেন।
এদিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচার কাজ আধাবেলা বন্ধ থাকছে। ফলে মঙ্গলবার (০৬ জুন) বেলা ১১টার পর আপিল বিভাগ ও দুপুরের পর হাইকোর্ট বিভাগে বিচার কাজ হচ্ছে না। একইভাবে চলবে না চেম্বার আদালতের কার্যক্রমও।
সাবেক প্রধান বিচারপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমান ১৯৩৬ সালে ১ মার্চ যশোর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা খান বাহাদুর লুৎফর রহমান যশোর জেলার একজন কৃতি সন্তান ছিলেন। তিনি আইন ব্যবসা ও সুষ্ঠু রাজনীতিতে অনেক অবদান রেখে গেছেন।
লতিফুর রহমান যশোর জেলা স্কুলে পড়াশুনা করেন। ওই স্কুল থেকে ১৯৫০ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ, গণিত শাস্ত্রে ডিস্টিংশন পেয়ে পাশ করেন। তিনি মেরিট লিস্টেও বৃত্তি পান। ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। পরে লতিফুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশুনা করেন এবং স্যার সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন।
পেশাজীবনের শুরুতে লতিফুর রহমান কায়েদে আজম কলেজ (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ) ও জগন্নাথ কলেজে (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন।
১৯৬০ সাল থেকে তিনি ঢাকা হাইকোর্টে আইন পেশা শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে অধিভুক্ত হন।
১৯৭৯ সালের ২১ নভেম্বর লতিফুর রহমান সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৮১ সালের ৪ নভেম্বর তার বিচারকের চাকরি স্থায়ী হয়। ১৫ জানুয়ারি ১৯৯০ তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
২০০০ সালের ১ জানুয়ারি তিনি দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন অবসর গ্রহণ করেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হিসেবে তিনি ২০০১ সালের ১৫ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
লতিফুর রহমান ১৯৫৯ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার দুর্নীতি দমন বিভাগের পরিচালক গোলাম সারওয়ারের তৃতীয় কন্যা আয়েশা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
উল্লেখ্য, রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রীসহ ৩ কন্যা রেখে গেছেন।
Discussion about this post