মার্চ মাসের ১২ তারিখের পর হতে হাইকোর্ট এবং আপীল বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মাঝখানে কয়েকদিন অবকাশ কালীন বেঞ্চের কার্যক্রম চললেও পরবির্তিতে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ সতর্কতার অংশ হিসাবে জাতীয়ভাবে সমগ্র অফিস আদালতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই সাধারন ছুটি বর্ধিত আছে। কিন্ত ১৫ এপ্রিল এর পর থেকে কি আগের মত আবার পুনঃউদ্যমে আদালতের কার্যক্রম চলতে পারবে? IEDCR ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে জানা যায় কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ এখন ৪র্থ পর্যায়ে আছে। দৈনিক যে হারে সংক্রমন বাড়ছে তাতে কোন ভাবেই পুর্বের মত করে আদালত পরিচালনা করা সম্ভব না। আর যদি করাও হয় তাতে সংক্রমণ কোনভাবেই কমানো যাবে না বলে বিশেষজ্ঞগনরা মনে করেন।
কিন্ত অনির্দিষ্টকালের কালের জন্য এভাবে আদালত বন্ধ থাকা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি কে আরও স্থবির করে তুলতে পারে। মানুষের ন্যায় বিচার প্রাপ্তি ব্যাহত হবে যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক দুরত্ব ( Social Distancing) বজায় রেখে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। WHO সারাবিশ্বে সামাজিক দুরত্ব কার্যক্রম বজায় রেখে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য উপদেশমুলক গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে মামলা শুনানির জন্য বিশেষ বিধান করা যেতে পারে। যেমনঃ
কোর্ট প্রাংগনে প্রবেশ ও ক্যান্টিনঃ
১। কোর্টে প্রবেশের সময় প্রত্যেক ব্যক্তির শারীরিক তাপমাত্রা পরীক্ষা করা দরকার। তাপমাত্রা বেশি বা সর্দিকাশি কাশি আছে এমন ব্যাক্তিদের ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা উচিত।
২। আইনজীবী ব্যতিরেকে আদালত ভবনে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ক্লার্কদের প্রবেশ এর জন্য আইডি কার্ড প্রদর্শন করতে হবে।
৩। আইনজীবী সমিতি ভবনে প্রবেশ করার জন্য ক্লাইন্টদের অবশ্যই আইনজীবী কর্তৃক ইস্যু করা ক্লাইন্ট পাস সাথে থাকতে হবে। এভিডেভিট করার সময় উক্ত পাস প্রদশর্ন করতে হবে। তারিখ অনুযায়ী এধরনের পাস কার্ড একজন আইনজীবী আগেই বার থেকে সংগ্রহ করে রাখবেন। প্রতি পাস কার্ড ইস্যু করার জন্য ৫০ টাকা করে বার গ্রহন করবে। একজন আইনজীবী দৈনিক সর্বোচ্চ ১৫টি পাস কার্ড পাবেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে সেক্রেটারির অনুমোদনে কার্ড সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে।
৪। বারের ক্যন্টিনে প্রবেশ করার জন্য টেবিল ভিত্তিতে আসন সীমিত করে দিতে হবে বা ক্যান্টিন পুরপুরি বন্ধ থাকবে।
৫। আদালত চত্ত্বরে পরিস্কার পরিছন্নতা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা উচিত।
হাইকোর্ট বিভাগঃ
১। হাইকোর্ট বিভাগে মোশন শুনানির জন্য মোশন এভিডেভিট করার পর নির্ধারিত বেঞ্চে জমা দেবার সময় একটা মোশন কেন জরুরী তার সারসংক্ষেপ লিখে জমা দিতে হবে। সারসংক্ষেপ পড়ে আদালতের যদি মনে হয় এটা শুনানি করা দরকার তখনই এটা শুনানি করার জন্য পরের দিন লিস্টে আনা যেতে পারে। আর সারসংক্ষেপ পড়ে যদি আদেশ দেবার মত কোন কারন থাকে তাহলে উক্ত আদালত যদি মনে করেন তবে সরাসরি সেই আদেশ প্রদান করতে পারেন। আদালত মনে করলে সীমিত আকারে কজ লিস্ট তৈরি হতে পারে।
২। কোন ধরনের মেনশন স্লিপ লাইনে দাড়িয়ে দেওয়া এই মুহুর্তে বন্ধ থাকা উচিত। আদালত বসার আগেই বেঞ্চ অফিসার তা গ্রহন করতে পারে।Adjournment যেমন Not Today, Not This week বেঞ্চ অফিসার দিতে পারে।
৩। আদালত কক্ষে আইনজীবীদের নির্ধারিত আসনগুলোতে নূন্যতম ৩ ফিট দুরত্ব বজায় রেখে বসার নিয়ম করা উচিত। আসন খালি থাকা সাপেক্ষে অন্য আইনজীবী প্রবেশ করতে পারবেন। যাদের আইটেম আগে তারা আগে প্রবেশ করবে এমন নিয়ম হওয়া উচিত।
৪। কোর্ট রুমে প্রবেশের পুর্বে হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকতে পারে যা আইনজীবীগন অবশ্যই ব্যবহার করবেন।
৫। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোর্ট রুমে ব্লিচিং পাউডারের মিশ্রণ স্প্রে করা যেতে পারে।
৬। অবকাঠামো তৈরি সাপেক্ষে ভিডিও হিয়ারিং এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আইনজীবীরা নিজেদের চেম্বারে বসে হিয়ারিং করতে পারে সেই ব্যবস্থা থাকা দরকার। যেসব আইনজীবীর এই ব্যবস্থা নেই আইনজীবী সমিতিতে কিংবা আদালতে নির্দিষ্ট স্থানে এই ব্যবস্থা থাকতে পারে।
৭। কোর্ট ফি এবং এভিডেভিট এর নিয়ম সহজ করা যেতে পারে যাতে লোক সমাগম এড়ানো যায়।
সর্বপোরি প্রস্তাব থাকবে যেন উক্ত বিষয় গুলো নিশ্চিত করে আদালতের কার্যক্রম শুরু করা হয় নতুবা কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবার আশংকা থাকবে। ১০০% সুনিশ্চিত ভাবে সামাজিক দুরত্ব বজায় থাকবে এমন অবস্থা তৈরি করেই আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা স্বাস্থ্যকর হবে। প্রয়োজনে এসব ব্যাবস্থা গ্রহন করার জন্য আদালতে আরো কিছু দিনের জন্য ছুটি বর্ধিত হতে পারে। এসব বিষয়ে আলোচনা এবং সঠিক পদ্ধতি গ্রহন করার জন্য সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং সুপ্রীম কোর্ট প্রশাসনের সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহন করা উচিত। দেশে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হোক সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে|
নিবেদক
মোকাররামুছ সাকলান
আইনজীবী
বাংলাদশ সুপ্রীম কোর্ট
Discussion about this post