[responsivevoice_button voice=”Bangla India Female” buttontext=”Listen to Post”]
নিজস্ব প্রতিবেদক: সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত একটি ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’।
এ নিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি নেই। এ ঘটনায় দুই বাহিনীর পারস্পরিক আস্থায় ঘাটতি তৈরি হবে না। এ ঘটনায় দায়ী হিসেবে যে চিহ্নিত হবে, তারই শাস্তি হবে। এর দায় বাহিনীর ওপর বর্তাবে না। আজ বুধবার কক্সবাজারে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা এ বক্তব্য রাখেন।
৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। সিনহার ওপর গুলি চালানো নিয়ে যে ব্যাখ্যা পুলিশ দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে গত মঙ্গলবার তদন্ত দল তাদের কাজ শুরু করেছে। এদিকে সিনহার বোন ৯ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।
সিনহাকে পুলিশের গুলি চালানো নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে গতকাল বুধবার কক্সবাজারে গিয়ে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং আইজিপি বেনজীর আহমেদ। এরপর কক্সবাজারের সেনাবাহিনীর বাংলো জলতরঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন তারা।
জেনারেল আজিজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেজন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মর্মাহত এবং পুলিশ বাহিনী মর্মাহত। যে মেসেজটা আমরা দিতে চাই তা হচ্ছে- আমরা এটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখতে চাই। আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটি জিনিস আমরা নিশ্চিত করতে চাই- যে ঘটনাটি ঘটেছে ওই ঘটনার সঙ্গে যে যে সম্পৃক্ত থাকবে, তদন্ত টিম যাদের চিহ্নিত করবে, তারা সেই দোষের শাস্তি পাবে। এর দায়-দায়িত্ব কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ওপর বর্তাবে না। এখানে কোনো প্রতিষ্ঠান কাউকে সহযোগিতা করবে না আবার কারও বিপক্ষেও যাবে না।
সেনাপ্রধান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ ও সেনাবাহিনী নিয়ে একটি জয়েন্ট তদন্ত টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে যারা গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে কাজ শুরু করেছে। এ তদন্ত দলের প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আস্থা আছে এবং পুলিশ বাহিনীরও আস্থা আছে।
জেনারেল আজিজ বলেন, বিগত ৫০ বছরে এ দেশে যে উন্নতি-অগ্রগতি এসেছে, দেশি-বিদেশি যেসব ঝুঁকি এসেছে আমরা সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছি। আমাদের মধ্যে যে মিউচুয়াল ট্রাস্ট, কনফিডেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন অনেক বছর ধরে তৈরি হয়েছে এটি অটুট থাকবে, এতে কোনো রকমের চিড় ধরে এমন কোনো কিছু সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও হবে না এবং পুলিশ বাহিনী বলেছে তাদের পক্ষ থেকেও হবে না।
এ ঘটনাকে হাতিয়ার করে কেউ যেন সেনা-পুলিশ সম্পর্ক নষ্ট করতে না পারে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান জেনারেল আজিজ। তিনি বলেন, এ ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনী এবং পুলিশের মধ্যে একটা অনাকাক্সিক্ষত কিংবা চিড় ধরানো বা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করার কোনো প্রয়াস যাতে কেউ না চালায়, আমরা সেটি সবাইকে অনুরোধ করব। আমাদের সবার চেষ্টা করা উচিত তদন্তটা যাতে নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হয়। ঘটনা যেহেতু তদন্তাধীন আছে, আমরা সেটি নিয়ে অন্য কোনো কথা বলব না।
আইজিপি বেনজীর আহমেদ বলেন, আমাদেরও একই কথা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ গত ৫০ বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করার ইতিহাস রয়েছে। গত ৫০ বছরে দেশের অনেক ক্রাইসিস মুহূর্তে এ দুটি বাহিনী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। আমাদের মধ্যে একটা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং আস্থার সম্পর্ক রয়েছে। আমরাও একটাকে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখি।
পুলিশপ্রধান বলেন, অনেকে এ সুযোগে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলছেন। আমি বিশ্বাসকরি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষ, চৌকস বাহিনী। যারা বিভিন্ন উসকানিমূলক কথা বলে দুই বাহিনীর মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন, তারা কখনও সফল হবে না।
Discussion about this post