কক্সবাজার প্রতিনিধি: অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় নিজেদের দায় স্বীকার করেছেন পুলিশের আরো চার সদস্য। তারা হলেন টেকনাফ থানার সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন। এদিকে, রাশেদ হত্যার ঘটনাস্থল পুলিশের সেই চেকপোস্ট পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রামের নবাগত ডিআইজি আনোয়ার হোসেন।
জানা যায়, আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে র্যাবের একটি দল তাদের কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে হাজির করেন। পরে সোয়া ১১টার দিকে এসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুনকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে নেওয়া হয়। বেলা ১২টার দিকে কনস্টেবল সাফানুর করিম ও কামাল হোসেনকে একই আদালতে নেওয়া হয়। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড সম্পন্ন হয়।জবানবন্দি শেষে আদালতের নির্দেশে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব ১৫ এর সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসালাম সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে রবিবার এই চার আসামিকে দ্বিতীয় দফায় চারদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাব। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, দ্বিতীয় দফায় চারদিনের রিমান্ডে এই চার আসামি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তারা স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছেন। তাই তাদের আদালতে নেওয়া হয়েছে।
চেক পোস্ট পরিদর্শনে ডিআইজি: টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্র, বাহারছড়া ও শামলাপুর পুলিশ চেকপােস্ট পরিদর্শন করেছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের নবাগত ডিআইজি মাে. আনােয়ার হােসেন। বুধবার তিনি ওই চেকপােস্ট পরিদর্শনকালে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাহারছড়া চেকপােস্টে আইন প্রয়ােগে সর্বোচ্চ সর্তক হতে হবে । দায়িত্ব পালন করতে হবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে । এছাড়াও নবাগত ডিআইজি মাে. আনােয়ার হােসেন হিমছড়ি ও ইনানী পুলিশ ফাঁড়িও পরিদর্শন করেন এবং সকল পুলিশ সদস্যকে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। পরে তিনি যােগ দেন টেকনাফ মডেল থানায় অনুষ্ঠিত বিশেষ কল্যাণ সভায় । কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হােসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সদর সার্কেল ) ও টেকনাফ মডেল থানার ওসি উপস্থিত ছিলেন।
গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন (অব.) সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়। নিহতের বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরির্দশক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। পরে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এপিবিএনের তিন সদস্য ও মারিশবুনিয়া গ্রামের তিন ব্যক্তিকে। ঘটনার সময় ৩১ জুলাই রাতে এপিবিএনের তিন সদস্য শামলাপুর তল্লাশি চৌকির দায়িত্বে ছিলেন। আর মারিশবুনিয়া গ্রামের তিন ব্যক্তি সিনহা হত্যা ঘটনায় টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলায় সাক্ষী ছিলেন।
এর আগে টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও থানার এসআই নন্দলাল রক্ষিতকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওসি প্রদীপকে চার দফায় ১৫ দিন এবং লিয়াকত ও নন্দ দুলাল রক্ষিতকে তিন দফায় ১৪ দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। লিয়াকত ও নন্দ দুলাল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। মামলা অপর ছয় আসামি এপিবিএনের তিনজন ও মারিশবুনিয়া গ্রামের তিন ব্যক্তি তিন দফার রিমান্ড শেষে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে ওসি প্রদীপসহ ৯ আসামি জেলা কারাগারে আছেন।
Discussion about this post