উচ্চ আদালতে আপিলে ফাঁসির আদেশ বহাল রয়েছে দক্ষিণ সুরমার শষ্যউরা গ্রামের মছব্বির আলীর। ২০০৭ সালের ১৯ আগস্ট সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত হন তিনি। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের এক ধাপ দূরে থেকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলার অপেক্ষায় এই বন্দি।
এভাবে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে রয়েছেন আরও ৩০ ফাঁসির আসামি। যারা পৃথক মামলায় বিভিন্ন সময় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত। এদের মধ্যে রয়েছেন একজন নারীও। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির সেলে কাটছে তাদের জীবন। নিম্ন আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এসব কয়েদিদের মামলার আপিল চলমান রয়েছে উচ্চ আদালতেও। এখন তারা উচ্চ আদালতের আদেশের অপেক্ষায়।
দণ্ডপ্রাপ্তদের বেশিরভাগ হত্যা মামলায়। অন্যরা ডাকাতি, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত। এই কারাগারে ফাঁসির সেলে থাকা কয়েদির মধ্যে রয়েছেন শিশু রাজন ও আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাও।
ফাঁসির আসামিদের মধ্যে একমাত্র মহিলা কয়েদি ফাতিহা মাশকুরা (৪০)। তিনি নগরীর সওদাগরটুলা নিজ বাসায় স্বামী ইবরাহিম খলিলকে হত্যা করেন। এ মামলায় চলতি বছরের ৬ জুন সিলেট মহানগর দায়রা জজ তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।
নারী শিশু নির্যাতন মামলায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শস্যউরা গ্রামের জোবেদ আলীর ছেলে মো. মছব্বির আলী (৫০) ছাড়াও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মধ্যে রয়েছেন, শিশু আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামি জকিগঞ্জের বাল্লা উপজেলার মৃত আ. খালিকের ছেলে সাবেক পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান পুতুল (২৫) ও সুনামগঞ্জের ছাতকের মঈনপুরের হবি রহমানের ছেলে আতাউর রহমান গেদা (৩৩)।
ফাঁসির সেলে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন শিশু রাজন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কামরুল ইসলাম ওরফে কামরুল (৩০), তাজ উদ্দিন বাদল (১৯), সাদিক আহমদ ওরফে বড় ময়না (২৮)।
এছাড়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত সবাই বৃহত্তর সিলেটের বাসিন্দা। তারা হলেন, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার নভাগ গ্রামের লেচু মিয়া (৩৯), একই গ্রামের মুজিব আলী (৫০) ও খতিরা গ্রামের ফজর আলী (৩৫), জকিগঞ্জের আজর গ্রামের মো. নেজাম উদ্দিন (৬৭) ও সমানীনগরের আনোয়ারপুরের নরুল ইসলাম রাকিব (২৬), গোলাপগঞ্জের ঘোষগাঁওয়ের কলা মিয়া (৩৯)।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার কাকিয়ার আব্দা গ্রামের পাবেল আহমদ (২৭), আজমিরীগঞ্জের শিবপাশা গ্রামের ফয়ছল মিয়া (২৩), একই উপজেলার বনগাঁওয়ের আব্দুল খালিক (৩৮), বানিয়াচংয়ের ত্রিকরমহল্লা গ্রামের আ. রশিদ (৩২), একই উপজেলার আগুয়া গ্রামের রেনু মিয়া (৬৫), একই গ্রামের আলী হায়দার (৬৫) ও হাবিব মিয়া (৪৩), তুপিয়াজুড়ি গ্রামের আব্দুল আহাদ (৭২)।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কোনাগাওয়ের মো. দেলোয়ার হোসেন রিপন (৩৮)।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার শ্ররামসী সাতহাল গ্রামের শাহ আলম (৪৩), উপজেলার লোহারগাঁও গ্রামের ইউসুফ আলী (৩৬), একই গ্রামের মন্তাজ আলী (৭৪), জেলার দোয়ারাবাজার বাগানবাড়ি এলাকার মো. মোসলেম উদ্দীন (৬৫), তাহিরপুর উপজেলার সুন্দরপাহাড়ি গ্রামের আ. রহিম (২৬), একই গ্রামের মহরম আলী (২৪)।
আর ডাকাতি মামলায় সিলেট সদরের বড়ফৌদ গ্রামের শাহাব উদ্দিনের (৪৫) মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাসুদ পারভেজ মঈন বাংলানিউজকে বলেন, ফাঁসির আসামি প্রায়সময় কম-বেশি হয়। তবে বুধবার পর্যন্ত কারাগারে ৩১ জন ফাঁসির আসামি রয়েছে।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ছগির মিয়া বলেন, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এসব আসামির প্রত্যেকের মামলা উচ্চ আদালতে চলমান রয়েছে। আপিলে নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকলে পরবর্তীতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদনের সুযোগ পাবেন তারা।
এর আগে বুধবার (১৩ জুলাই) প্রথম প্রহরে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রতিবেশীকে হত্যা মামলায় চা শ্রমিক মাকু রবি দাশের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ।
Discussion about this post