সুপ্রিমকোর্ট-আইন মন্ত্রণালয়ের আদেশ-পাল্টা আদেশে অধস্তন আদালতের বিচারকরা বিব্রত অবস্থায় আছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। বিদেশ গমন, সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্প্রতি একাধিক আদেশ জারি করেছে বিচারকদের নিয়ন্ত্রণকারী এই দুই প্রতিষ্ঠান।</p> আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুপ্রিমকোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের এই টানাপোড়েনে কোন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব মানবেন- তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন অধস্তন আদালতের বিচারকরা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শুধু সরকারের বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিমকোর্টের ওপর ন্যস্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।</p> এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান প্রবীণ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজমদার বলেন, ‘বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে হলে পুরোপুরি স্বাধীন করা উচিত। আর এজন্য অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণের একক ক্ষমতা থাকা উচিত সুপ্রিমকোর্টের হাতে। অন্যথায় এভাবে টানাপোড়েন চলতে থাকলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।’</p> এদিকে মাসদার হোসেন (বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ) মামলার রায়ে বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অধীনে পৃথক সচিবালয় গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ওই রায়ের বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের আমলে পৃথক সচিবালয় স্থাপনের উদ্যোগও নেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে অদৃশ্য কারণে আর সেটি এগোয়নি।</p> জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘আমি মনে করি এই টানাপোড়েনের কারণে বিচারকরা বিব্রত। এজন্য সুপ্রিমকোর্টের অধীনে আলাদা সচিবালয় করে ফেলা উচিত। এখন সড়ক ভবনে পর্যাপ্ত জায়গাও আছে। পৃথক সচিবালয় করে ফেললে আর টানাপোড়েনের সৃষ্টি হবে না। বিচার বিভাগ নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট-মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এ ধরনের বিরোধ কাম্য নয়।’</p> আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয় যেসব পাল্টা আদেশ-নির্দেশ জারি করেছে তাতে স্পষ্ট যে, সরকার আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অধস্তন আদালতের ওপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চাচ্ছে। অর্থাৎ মাসদার হোসেন মামলার রায় সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক নয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। এর একটিই সমাধান আছে। সেটি হল পৃথক সচিবালয় তৈরির মাধ্যমে অধস্তন আদালতের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিমকোর্টের ওপর ন্যস্ত করা। এটি না হওয়া পর্যন্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শুধু সরকারের বুলির মধ্যেই থেকে যাবে।’</p> পাল্টাপাল্টি আদেশ বিদেশ গমন :</span> বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে বিচারকদের সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে প্রেষণে নিযুক্ত বিচারকরা সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ না নিয়েই শুধু মন্ত্রণালয়ের আদেশে বিদেশ গমন করছিলেন। এমতাবস্থায় ১৫ ফেব্র“য়ারি সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন ‘বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা’ শীর্ষক একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন।</p> ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচার কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি দান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান মহামান্য রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত এবং সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তা প্রযুক্ত হয়ে আসছে। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয় যেমন কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরি, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা বিধান, বিদেশ গমন ও চাকুরির অন্যান্য শর্তাবলী ইত্যাদি বিষয়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কতৃক সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে নির্ধারণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’</p> বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সংবিধান ও মাসদার হোসেন মামলার রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী অধস্তন আদালতগুলোকে একটি পৃথক, স্বতন্ত্র ও স্বাধীন সার্ভিস হিসেবে ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস’ নামে নামকরণ করা হয়েছে এবং উক্ত জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যগণের কর্মস্থল নির্ধারণ, চাকুরির শর্তাবলী ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরি, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা বিধান ও চাকুরির অন্যান্য শর্তাবলী) বিধিমালা, ২০০৭ প্রণয়ন ও বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে। ওই বিধিমালার বিধি ৩-এ উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের কর্মস্থল নির্ধারণের বিধান; বিধি ৭-এ উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শক্রমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের প্রেষণ বা অন্যবিদভাবে নিয়োগের বিধান বিবৃত হয়েছে।’</p> বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়,‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণকে সুপ্রিমকোর্ট, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষের অফিসে প্রেষণ বা অন্যবিদভাবে নিয়োগ করা হলেও তারা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাই থাকেন। এবং কেবল উক্ত নিয়োগকালীন সাময়িকভাবে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা হতে বিরত থাকেন বিধায় সংবিধানের ১০৯, ১১৬ ও ১১৬(ক) অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিধান সাপেক্ষ তাদের ওপর অত্র কোর্টের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা পূর্বাপর অব্যাহত থাকে। এরূপে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের চাকুরির শর্তাবলী, বিদেশ গমন ইত্যাদি সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে পরামর্শের বাধ্যবাধকতা থাকায় এর যে কোনোরূপ ব্যত্যয় আইন, বিধিবিধান ও শৃঙ্খলাপরিপন্থী এবং অসদাচরণের শামিল। এমতাবস্থায় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ সুপ্রিমকোর্ট, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষের অফিসে প্রেষণ বা অন্যবিদভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে দায়িত্ব পালনকালে তাদের চাকুরির শর্তাবলী বিশেদ ভ্রমণ, ইত্যাদি সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কতৃক সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে পরামর্শে গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশক্রমে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হল।’</p> এই বিজ্ঞপ্তি জারির পর ১১ এপ্রিল আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। ‘প্রেষণে কর্মরত থাকাকালীন বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টের অনুমোদন গ্রহণ না করা’ শীর্ষক মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশে বলা হয়, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ প্রেষণ বা অন্যবিধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে দায়িত্ব পালনকালে তাদের চাকুরির শর্তাবলী, বিদেশ গমন ইত্যাদি সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ (আইন মন্ত্রণালয়) কর্তৃক সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ হতে অনুরোধ করা হয়। সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক উত্থাপিত প্রশ্নের প্রেক্ষিতে উল্লেখ করা আবশ্যক যে, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ যে বিভাগে প্রেষণে নিয়োজিত থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে সে বিভাগের বিধি-বিধান প্রযোজ্য হয়। প্রেষণে নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার ন্যায় একইভাবে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যগণ নিজ নিজ বিভাগের বাইরে প্রেষণে নিযুক্ত হলে যে প্রতিষ্ঠানে প্রেষণে নিযুক্ত হন সে প্রতিষ্ঠানের আইন-কানুন, বিধি-বিধান অনুসারে তাদের ছুটি মঞ্জুরী, বিদেশ ভ্রমণ ও অন্যান্য শর্তাবলী নিয়ন্ত্রিত হয়। এমতাবস্থায় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে তাদের বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ গ্রহণের আবশ্যকতা নেই, সে মর্মে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি সদয় অনুমোদন জ্ঞাপন করেছেন।</p> সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ :</span> বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট মন্ত্রণালয়ের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। মাসদার হোসেন (বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ) মামলার রায়ের আলোকে তৈরিকৃত বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালা-২০০৭ অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবে। ওই বিধিমালায় বলা হয়েছে, ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ (আইন মন্ত্রণালয়) কার্যকরভাবে পরামর্শ গ্রহণের জন্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং কোনো ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব ও সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শে ভিন্নতা থাকলে, তখন সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ প্রাধান্য পাবে।’ কিন্তু গত ৭ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ গ্রহণ ছাড়াই মোট ১৪ জন বিচারককে একটি অভিজ্ঞতা বিনিময় সভায় অংশগ্রহণের অনুমোদন দিয়ে আদেশ জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। এর পরপরই সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন ওই বিচারকদের অনুমোদন বাতিল করে। পাশাপাশি অসন্তোষ প্রকাশ করে কোন কর্তৃত্ববলে ওই আদেশ জারি করা হয়েছে সে বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা সুপ্রিমকোর্টে পাঠাতে আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়।</p> এছাড়া গত ১১ এপ্রিল আইন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি গাড়ি ব্যবহারের বিষয়ে একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। ১৫ মার্চ সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনের উদ্যোগে সাভারে অনুষ্ঠিত একটি কর্মশালাকে কেন্দ্র করে এই আদেশ জারি করা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিচার বিভাগীয় এক কর্মকর্তা বলেন, সাভারে ‘বিচারিক কাজের যথাযথ মূল্যায়ন এবং সাফল্য নির্ধারণের মানদণ্ড নিরূপণ’ শীর্ষক একটি কর্মশালা সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনের উদ্যোগে ‘ইউএসএইড এবং জাস্টিস ফর অল’ কর্মসূচির সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়। ওই কর্মশালায় ৩০ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। জেলা জজ ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তা/চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে সরকারি গাড়ি ব্যবহারে প্রাধিকার পাবেন বলে সুপ্রিমকোর্টের অনুমতিপত্রে বলা হয়। সে অনুযায়ী বিচারকরা ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন।</p> >১১ এপ্রিল জারি করা আইন মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশে বলা হয়, ‘জুডিশিয়াল সার্ভিসের কোন কোন সদস্য সরকারের অনুমতি ব্যতীত বিভিন্ন আদালত/ট্রাইব্যুনাল/দপ্তর-এর সরকারি গাড়ি সরকারি যানবাহন (ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ১৯৮৬-এর বিধি ৫-এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে কর্মস্থলের ২৫ মাইলের বাইরে ব্যবহার করছেন। এমনকি তারা রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন সভা/সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য সরকারের অনুমোদন ছাড়া তাদের নিজ নিজ জেলার বাইরে গাড়ি ব্যবহার করছেন। সরকারি গাড়ির এরূপ অননুমোদিত ব্যবহার উপর্যুক্ত বিধিমালা পরিপন্থী হওয়ায় ধারা ৩(৩) মোতাবেক অসদাচরণ। ভবিষ্যতে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে তা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পর্যায়ে পড়ে বলে প্রতীয়মান হয়।’ একই দিন (১১ এপ্রিল) আইন মন্ত্রণালয়ের আরেক আদেশে বলা হয়, ‘ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে কিছু কিছু দপ্তর থেকে টেবিলবহির্ভূতভাবে মঞ্জুরি আদেশ প্রদান করা হচ্ছে। উক্ত মঞ্জুরি আদেশের অনুকূলে বিলও দাখিল করা হচ্ছে। যা আইন ও বিধিসম্মত নয়। সার্বিক অবস্থায় আইন ও বিচার বিভাগের অনুকূলে মঞ্জুরিকৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে বাজেটে প্রদত্ত আর্থিক ক্ষমতা বণ্টনের টেবিল অনুযায়ী আইন ও বিচার বিভাগের অনুমতি ছাড়া উপস্থাপিত বিল প্রদান করা হলে তার দায়িত্ব এ বিভাগ বহন করবে না।’ সর্বশেষ বৃহস্পতিবার নির্বাহী ও বিচার বিভাগের উদ্দেশ্যে একটি আদেশ জারি করে সুপ্রিমকোর্ট। এতে বলা হয়, সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক আয়োজিত সভা, সেমিনার, কর্মশালা, প্রশিক্ষণ, সম্মেলন ইত্যাদি সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কোনরূপ অসহযোগিতা বা শর্ত ও বিধি-নিষেধ আরোপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক জারিকৃত আদেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন ও সার্বিক সহায়তা প্রদান করতেও বলা হয় আদেশে।</p> আদেশে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের অন্যতম হচ্ছে বিচার বিভাগ। সুপ্রিমকোর্ট বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদে দেশের নিু আদালত ও ট্রাইব্যুনালের ওপর হাইকোর্ট বিভাগের নিরংকুশ তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছে। যার মধ্যে আবশ্যিকভাবে সকল প্রকার প্রশাসনিক, আর্থিক ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক আয়োজিত সকল সভা, সেমিনার, কর্মশালা, প্রশিক্ষণ, সম্মেলন ইত্যাদি সরকারি অনুষ্ঠান হিসাবে গণ্য। তাই এরূপ অনুষ্ঠানে আগত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের টিএ/ডিএ বিল উপস্থাপনে বা সরকারি গাড়ি ব্যবহারে যে কোনরূপ বিধি-নিষেধ আরোপ অনাকাক্সিক্ষত ও অগ্রহণযোগ্য।</p> ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়, ‘বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল বিচার বিভাগ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সুপ্রিমকোর্টসহ অধস্তন আদালতসমূহ ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে ই-জুডিশিয়ারি প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এ টু আই শীর্ষক প্রকল্প এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের বিচার বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আরও একাধিক কারিগরি/উন্নয়ন প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এছাড়াও অধস্তন আদালতের সামগ্রিক সক্ষমতা আরও বৃদ্ধির প্রয়োজনে প্রায়ই অধস্তন আদালতের বিচারকগণকে বিভিন্ন সভা, সেমিনার, কর্মশালা ও সম্মেলনে অংশগ্রহণের প্রয়োজন হয়। এতে সকল কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহায়তা একান্তভাবে কাম্য।-যুগান্তর</p> <b>প্রতি মুহুর্তের খবর পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিন<
Discussion about this post