সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া নিম্ন আদালতের কোনো বিচারকের প্রতি শোকজ জারি বা কোনো ধরনের ব্যাখ্যা চাইতে পারবে না আইন মন্ত্রণালয়। এমন কাজ করতে আইন মন্ত্রণালয়কে নিষেধ করেছে সুপ্রিম কোর্টের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিএ) কমিটি। গত ১২ নভেম্বর এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট চিঠি দিয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন।
একইসঙ্গে ঢাকার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম জেসমিন আরার কাছে আইন মন্ত্রণালয় যে ব্যাখ্যা তলব করেছিলো তার দায় থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ঢাকার অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। এরপর ছুটি বাড়ানোর আবেদন করেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট ছুটি বৃদ্ধি না করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। একইসঙ্গে ওই কর্মকর্তাকে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করতে বলা হয়। এরপর তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং তার আবেদনের ভিত্তিতে তাকে বিচার কাজে যোগদানের অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সে অনুযায়ী ঢাকার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তার যোগদানপত্র গ্রহন করেন। এরপর গত ২৭ অক্টোবর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চায় আইন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন থাকাবস্থায় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে গোচরীভূত না করে কেন অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াণল ম্যাজিস্ট্রেটের যোগদানপত্র গ্রহন করা হয়েছে। এরপর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ব্যাখ্যা তলবের বিষয় থেকে অব্যাহতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে চিঠি দেন। এরপর জিএ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ব্যাতীত কোন বিচারকের কাছে আইন মন্ত্রণালয় ব্যাখ্যা চাইতে পারে কিনা সে বিষয়ে গত ১০ নভেম্বর এ বিষয়ে জিএ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আলোচনা শেষে জিএ কমিটির সদস্যগণ অভিমত দেন যে, সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদে অধস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালের উপর সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে প্রণীত বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (কর্মস্থল নির্ধারন, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরি, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা বিধান এবং চাকুরির অন্যান্য শর্তাবলী) বিধিমালা, ২০০৭ এ উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সাভির্সের সদস্যগণের নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা বিধান সংক্রান্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহনের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। ফলে ঢাকার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম জেসমিন আরার নিকট হতে ব্যাখ্যা তলবের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ গ্রহন করেনি আইন মন্ত্রণালয়। এই পরামর্শ গ্রহন না করার উক্ত বিধিমালার পরিপন্থি, অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্খিত। গত ১২ নভেম্বর এই সিদ্ধান্ত আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
Discussion about this post