বিচারপ্রার্থীদের আইনি সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দাফতরিক ও বিচারিক সেবার মানোন্নয়নে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ২০১৫ সালে একটি অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয়। এখন পর্যন্ত ওই বাক্সে চারশ’র অধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট ও জেলা পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে অভিযোগ বাক্স স্থাপন করার প্রথম বছর ১০৩টি অভিযোগ জমা পড়ে। ২০১৬ সালে জমা পড়ে ২১৮টি অভিযোগ। চলতি বছর ২০১৭ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৭৯টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজন ও নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে, তিন বছরে কতজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এর সঠিক তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে অভিযোগ বাক্সের তত্ত্বাবধানে আছেন হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সোহাগ রঞ্জন পাল। এর আগে অপর রেজিস্ট্রার মো. তাছিম বিল্ল্যাহ এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) মো. সাব্বির ফয়েজ জাগো নিউজকে জানান, অনেক অভিযোগই আসে। সেই অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হলে তা বিচারিক কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হয়। পরে তা যাচাই-বাছাই করে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
তবে, গত তিন বছরে কতজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেই হিসাব তার কাছে নেই বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, অভিযোগ বাক্স স্থাপনের পর ২০১৫ সালের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পরামর্শক্রমে হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির নেতৃত্বে বিচারিক কমিটি গঠন করা হয়। এর প্রধান হন বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. শওকত হোসেন।
এরও আগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সময়ে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে ‘জাজেজ’ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রধান ছিলেন প্রধান বিচারপতি।
বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিচারিক কমিটি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে এবং সুপ্রিম কোর্টের রুলস অনুযারী বিচারিক কমিটি গঠন করা হয়। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগ তদন্তে এ কমিটি কাজ করে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিরও সুপারিশ করে ওই কমিটি।
তিনি আরও বলেন, সারা দেশ থেকেই অনেক অভিযোগ আসছে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে নিয়ম অনুযায়ী দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিচার বিভাগকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
‘সুপ্রিম কোর্টে স্থাপিত এ বাক্স থেকে অভিযোগ আমলে নিয়ে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বিচার বিভাগের কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও গতিশীল হচ্ছে’ বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিচার বিভাগের গতিশীলতা, বিচারিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নানা উদ্যোগ নেন। বিশেষ করে উচ্চ আদালতে অনলাইন কার্যতালিকা, অনলাইন বেইল কনফারমেশন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ (পরীক্ষামূলক চালু), অনলাইন বুলেটিন, বিচার বিভাগীয় তথ্য বাতায়ন, সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাইব্রেরি ই-লাইব্রেরিতে রূপান্তর উল্লেখযোগ্য। এসব উদ্যোগ গ্রহণের ফলে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি যেমন কমছে, বাড়ছে বিচার কার্যক্রমের সেবার মান।
এর আগে ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের কল্যাণে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়। ওই কমিটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের কোনো বিচারপতি অনিয়মে জড়িত থাকলে অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারত।
তখনও রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনে একটি অভিযোগ ও পরামর্শ বাক্স স্থাপন করা হয়। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই ওই বাক্স আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দায়িত্ব নেয়ার পর আবারও অভিযোগ ও পরামর্শ বাক্স স্থাপন করা হয়।
-জাগোনিউজ
Discussion about this post