সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ৭ জুলাই অবসরে যাওয়ার পর এখন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে বিচারক আছেন ছয়জন। আইনজীবী মহলের মতে, প্রতিনিয়ত নতুন মামলা দায়েরের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারকের ঘাটতিতে মামলার স্তূপ জমে যাচ্ছে। কাঙ্ক্ষিত সময়ে বিচারকাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না।
গত ১৪ মার্চ বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম অবসরে যান। বিচারপতি বজলুর রহমান ছানা গত ১ জানুয়ারি ইন্তেকাল করেন। অর্থাৎ গত সাত মাসে তিনজন বিচারক বিদায় নিলেও আপিল বিভাগে কোনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে আপিল বিভাগে ১৩ হাজার মামলা বিচারাধীন।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আপিল বিভাগে এখন পাঁচজন বিচারক নেওয়ার সুযোগ আছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার ও বিচারাধীন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির স্বার্থে আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা ১১-তে উন্নীত করেছিল। পাশাপাশি হাইকোর্ট বিভাগেও নিয়োগ প্রক্রিয়া যা চলছে তার গতি খুব ধীর। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্ট বিভাগে ১০ জন অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের জন্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে নির্বাহী বিভাগে পরামর্শ পাঠানো হয়েছিল। হাইকোর্ট বিভাগে এখন ৮৫ জন বিচারক আছেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগে ১০ জন অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। চলতি বছর ১০ ফেব্রুয়ারি তাদের আটজনের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৫ ডিসেম্বর বিচারপতি জেএন দেব চৌধুরী মারা গেছেন এবং অন্যজন ফরিদ আহমেদ শিবলীকে স্থায়ী করা হয়নি।
হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদ গত ২ জানুয়ারি, বিচারপতি শামীম হাসনাইন ২৩ এপ্রিল ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ২৯ মে অবসরে গেছেন। বিচারপতি মো. মিজানুর রহমান ভুঁঞা আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ও বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক ৩০ ডিসেম্বরে অবসরে যাবেন। তিনজন বিচারক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কর্মরত রয়েছেন। চারজন বিচারক গুরুতর অসুস্থ রয়েছেন। এরমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) ইন্তেকাল করেছেন। হাইকোর্ট বিভাগে বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা চার লাখের বেশি।
সাধারণত হাইকোর্টের সিনিয়র বিচারকরাই আপিল বিভাগে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। আপিল বিভাগে পাঁচজনকে নিয়োগ দিলে হাইকোর্টেও বিচারকের শূন্যতা দেখা দেবে। আইনজীবীরা অবিলম্বে দুটি বিভাগেই বিচারক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
সংবিধানে হাইকোর্টে বিচারকের কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করা নেই। প্রধান বিচারপতির পরামর্শ ও প্রয়োজন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় থেকে আটজনের নাম প্রস্তাব করে সুপারিশ পাঠানো হয়। সে তালিকাটি আইন মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রয়েছে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে শিগগিরই বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গণমাধ্যমকে বলেন, অনেক দিন উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ নেই। এখন বিচারক নিয়োগ দরকার। এরই মধ্যে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জেনেছেন। আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।
Discussion about this post