অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে আড়াই বছরেও প্রকাশ না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। জানতে চেয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে বঙ্গভবনের দূরত্ব কতদূর?
সোমবার (৮ মে) রাষ্ট্রপক্ষ দুই সপ্তাহ সময় চাইলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এক সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করেন।
সকালে প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল একটি ফাইল দাখিল করলে আপিল বিভাগ বলেন, আপনি কি নিয়ে এসেছেন? অ্যাটর্নি মুচকি হেসে সময় আবেদনের কথা জানালে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা তো মনে করেছি এটা গেজেট।
আপিল বিভাগ বলেন, দুই সপ্তাহ, দুই মাস ও দুই বছর সময় আবেদন আপনার কাছে একই। সময় আবেদনে শব্দ চয়নও একই। আসলে কি চান আপনারা?
এ সময় প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর কোথায়? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল জাপানের টোকিও শহরের কথা জানান। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, সবাই মনে করে টোকিও বা নিউইয়র্ক সবচেয়ে বড় শহর।
অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, বলেন তো নিউইয়র্ক বা টোকিও এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে যেতে কত সময় লাগতে পারে? প্রধান বিচারপতি তখন নিজেই বলেন, বড়জোর ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। কিন্তু আমার ধারণা ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর। মনে হয়, সুপ্রিম কোর্ট থেকে গণভবন বা বঙ্গভবনের দূরত্ব কয়েক লাখ কিলোমিটার।
গেজেট এখনও প্রকাশ না করার বিষয়ে ইঙ্গিত করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আড়াই বছরে যেহেতু এই দূরত্ব পাড়ি দেওয়া সম্ভব হয়নি, মনে হয় আড়াই হাজার বছরেও মনে হয় তা সম্ভব হবে না।
গত ৪ এপ্রিল আপিল বিভাগ ৮ মে পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু এ দিনও রাষ্ট্রপক্ষ নতুনভাবে সময় নিল। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত গেজেট প্রণয়নে দ্বাদশ বারের মতো সময় নিল সরকার।
বিচারকদের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধি চূড়ান্ত করে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে আপিল বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে তলব করে।
তবে ওই বছর ১১ ডিসেম্বর রাতে আইন মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রের মাধ্যমে জানায়, নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
তবে রাষ্ট্রপতির এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে ১২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ দ্বিমত পোষণ করেন। আদালত বলেছেন, রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। বিধি প্রণয়ন সম্পর্কে আপিল বিভাগ বলেন, এটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্ন। এখানে কোনো কম্প্রোমাইজ নেই।
উল্লেখ্য, মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ৭ নম্বর নির্দেশনায় জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের জন্য পৃথক শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।
Discussion about this post