রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফেলে যাওয়া ছোট্ট শিশু ফাতেমা খাতুনের নামে পাঁচ লাখ টাকার এফডিআর (স্থায়ী আমানতের হার) জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া শিশু ফাতেমার সার্বিক কল্যাণসহ শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবত্বের দায়িত্ব পালন করার জন্য আদালতে একটি হলফনামা দাখিল করেছেন সেলিনা দম্পতি।
সোমবার এক্সিম ব্যাংকে ঢাকার একটি শাখায় এ এফডিআরের টাকা জমা দেন শিশুটির অভিভাবকত্ব পাওয়া আইনজীবী সেলিনা আক্তার। এরপর তিনি ঢাকার শিশু আদালতে তার রিসিভ কপি জমা দেন এবং একটি হলফনামা দাখিল করেন।
হলফনামায় তিনি উল্লেখ্য করেন,‘গত ২৫ জুলাই শিশু ফাতেমার বৈধ অভিভাবত্বের জন্য আদালতে আবেদন করি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ আগস্ট আদালত সার্বিক বিবেচনায় শর্ত সাপেক্ষে ফাতেমাকে আমার (সেলিনা আক্তার) ও আমার স্বামী ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে ফাতেমার নামে পাঁচ লাখ টাকার এফডিআর করেছি। এছাড়া শিশু ফাতেমাকে প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর ফলোআপের জন্য আদালতে হাজির করার অঙ্গীকার করছি। আদালতের সার্বিক নির্দেশনা পালন করব। ফাতেমার যাবতীয় ও সার্বিক কল্যাণসহ ফাতেমার শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবক নিযুক্ত হয়ে সমস্ত দায়িত্ব পালন করব।’
এ বিষয়ে আইনজীবী সেলিনা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন,‘আদালতের নির্দেশমতো আমরা এক্সিম ব্যাংকে ফাতেমার নামে পাঁচ লাখ টাকা এফডিআর জমা দিয়েছি। আমরা এখন শিশু ফাতেমাকে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। তাকে বাসায় আনার জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করেছি।’
শিশু আদালতের পেশকার এনামুল হক বলেন, আদালতের নির্দেশে শিশু ফাতেমার নামে পাঁচ লাখ টাকার এফডিআরের রিসিভ কপি আদালতে জমা দিয়েছেন সেলিনা আক্তার।
এর আগে ১৬ আগস্ট ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান ফাতেমার বৈধ অভিভাবকের জন্য সেলিনা দম্পতিকে নির্ধারণ করেন।
একই সঙ্গে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে সেলিনা-আলমগীর দম্পতির কাছে শিশুটিকে আদালত ২২ আগস্ট হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। এছাড়া শিশুটির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য ওই দম্পতিকে পাঁচ লাখ টাকার এফডিআর করারও নির্দেশ দেন আদালত।
প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই জর্ডান থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে দেশে ফিরছিলেন জয়দেবপুরের স্বপ্না বেগম। একই বিমানে শিশু ফাতেমাকে নিয়ে তার মাও ফিরছিলেন। স্বপ্না জর্ডানে গৃহকর্মী হিসেবে গিয়েছিলেন। অজ্ঞাতপরিচয় ওই নারীও একই কাজে সেখানে গিয়েছিলেন বলে জানতে পারেন স্বপ্না।
স্বপ্না বিমানবন্দর পুলিশকে জানান, ওই নারীও (ফাতেমার মা) জর্ডান থেকে একই ফ্লাইটে ফেরেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে কাস্টমস থেকে মালপত্র নিয়ে বের হয়ে বিমানবন্দরের ক্যানওপি পার্কিং এলাকায় স্বজনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন স্বপ্না।
এসময় বিমানে পরিচয় হওয়া শিশুটির মা তাকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপা আমার বাচ্চাটাকে একটু ধরেন। ভেতরে মালপত্র রয়েছে, নিয়ে আসছি। আগে কথা হওয়ায় সরল বিশ্বাসে শিশুটিকে কোলে তুলে নেন স্বপ্না। কিন্তু দীর্ঘসময় অপেক্ষার পরও সেই নারী আর ফেরেননি।
পরে স্বপ্না আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যদের কাছে ঘটনাটি জানালে তারা শিশুসহ স্বপ্নাকে বিমানবন্দর থানায় পাঠায়। ওইদিনই বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এরপর শিশুটিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়।
Discussion about this post