টাঙ্গাইলের সখিপুরে মোবাইল কোর্টে দুই বছরের দণ্ড পাওয়া স্কুল শিক্ষার্থী সাব্বির শিকদার ঘটনার সবিস্তার বর্ণনা দিয়েছেন আদালতে। তার নির্যাতনের বর্ননা শুনে বিচারক,আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণ স্তম্ভিত হয়ে যান।
আজ (২৭ সেপ্টেম্বর) মঙ্গলবার বিচারপতি এম.ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চে এ বর্ণনা দেন ঐ শিক্ষার্থী।
স্থানীয় এমপি অনুপম শাহজাহান জয়ের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় মোবাইলে কোর্ট তাকে দুই বছরের সাজা দেয় বলে আদালতে দাবি করেন সাব্বির।
ঘটনার বর্ণনায় তিনি আদালতে বলেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত নয়টার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। এমন সময় বাইরে থেকে কেউ আমাকে ডাক দেয়, ‘সাব্বির বাড়িতে আছো’। বাইরে এসে দেখি সিভিল ড্রেসে একজন ও আরেকজন পুলিশ আমাকে বলেন, তোমাকে থানায় যেতে হবে। এরপর আমাকে থানার ওসির রুমে নিয়ে যায়। ওসি আমাকে মোবাইল ফোন দেখিয়ে বলে, ‘এগুলো কি লিখছোস’। আমি বলেছি, এগুলো আমি লিখি নাই। এরপর বারবার আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাস করলে আমি আবারো বলি লিখি নাই। এরপর আমাকে এমপির বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমি এমপির বাসায় গিয়ে দেখি তিনি সোফায় বসে আছেন। আমাকে তার সামনে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি আমাকে বলেন, তুই আমার বিরুদ্ধে কি লিখছোস?। এরপর এমপি আমাকে দুইটি আঘাত করেন। কিন্তু এতে আমি কিছু মনে করি নাই।
সাব্বির বলেন, এসময় এমপি ওসিকে বলে, ওকে থানায় নিয়ে যাও। তারপর আমাকে থানায় নিয়ে এসে চোখ বেঁধে বেধম নির্যাতন করে এবং আমাকে বলে, তোকে ক্রসফায়ারে দিব। ক্রসফায়ারের ভয় এবং নির্যাতনে স্বীকার করেছি, আমি লিখেছি। তারপর আমাকে বলে, এ ধরণের লেখা আর লিখবি না। এ ঘটনার তিনদিন পর আমাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (টিএনও) রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। টিএনও আমাকে বুকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। এসময় আমার হুঁশ ছিল না। কে যেন আমাকে ঐখান থেকে উঠিয়ে নেয়। আমাকে থানায় নিলে ওসি বলে তোমাকে দুই বছরের দণ্ড দেয়া হয়েছে।
এ সময় সাব্বির আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলে, আমি এই ঘটনার সরকারের কাছে বিচার চাই।
এ পর্যায়ে আদালত বলে, কেউ কি তোমাকে এই বক্তব্য শিখিয়ে দিয়েছে। তখন সাব্বির বলেন, কেউ শিখিয়ে দেয়নি। আমি গাজা খাই না। এর সঠিক বিচার চাই।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখিপুর) আসনের সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহান জয় গত শুক্রবার রাতে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে বলা হয়, ফেসবুকে একটি আইডি থেকে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই জিডির পরিপ্রেক্ষিতে সখিপুর থানার পুলিশ উপজেলার প্রতিমা বনিক পাবলিক হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির সিকদারকে আটক করে। শনিবার তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। কারাদণ্ডের পর সোমবার সকালে ওই কিশোরকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেন সখিপুরের ওসি মাকসুদুল আলম।
Discussion about this post