স্ত্রীর নামে অবৈধভাবে নেওয়া প্লট অবশেষে ফেরত দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যান মো. নুরুল হুদা।
রাজউকের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে নুরুল হুদা তার স্ত্রী ওয়াহিদা হুদার নামে ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দ দিয়েছিলেন। পরে দুদকের মামলা থেকে রক্ষা পেতে এ প্লট রাউজককে ফেরত দেন হুদার স্ত্রী।
সম্প্রতি দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ অভিযোগ থেকে সাবেক রাজউক চেয়ারম্যান নুরুল হুদাকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (০১ মার্চ) দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মো. নূরুল হুদার বিরদ্ধে বিধি বহির্ভূতভাবে প্লট বরাদ্দ নেওয়া অভিযোগ নথিভুক্তির (অব্যাহতি) মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। (যার স্মারক নং-দুদক/ বি: অনু: ও তদন্ত-২/৩৫-২০১৪) দুদকের অনুসন্ধান চলাকালীন রাজউককে দেওয়া এক আবেদনে হুদার স্ত্রী ওয়াহিদা উল্লেখ করেন, আমার স্বামীকে যাতে বিব্রতকর পরিস্থিতির সন্মুখীন হতে না হয়, সেজন্য প্লটটি রাজউক বরাবর সমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
রাজউক কর্তৃপক্ষ পূর্বাচলে ওয়াহিদা হুদার প্লট ‘বুঝে পেয়েছেন’ বলে দুদককে জানিয়েছেন। রাজউক থেকে দুদকে পাঠানো এসব নথিপত্রের অনুলিপি বাংলানিউজের কাছে রয়েছে।
নথিপত্রে দেখা যায়, গত বছরের ৬ ডিসেম্বর মিসেস ওয়াহিদা হুদার প্লট ফেরত দেওয়ার আবেদনটি গ্রহণ করে রাজউক কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ও ২৫ নভেম্বর রাজউকে প্লট ফেরত দেওয়ার আলাদা দু’টি আবেদন করে মিসেস হুদা।
ইতোমধ্যে অনুমোদনপত্রের অনুলিপি রাজউক পরিচালক (ভূমি ও এস্টেট-২), রাজউকের চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব, প্রকল্প পরিচালক, রাজউক উপপরিচালক (হিসাব) ও মিসেস ওয়াহিদা হুদা বরাবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাজউক উপপরিচালক (এস্টেট-৩) স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মিসেস ওয়াহিদা হুদার প্লট সমর্পণ ও জমা করা অর্থ ফেরতের আবেদনটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত হওয়ায় মিসেস ওয়াহিদার নামে বরাদ্দ ৫ কাঠা (সেক্টর-৫, রাস্তা নং-৩০৯, প্লট-৪৯) আয়তনের ওই প্লটটি বাতিল করা হলো।
চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজউকের বর্তমান চেয়ারম্যান বরাবর প্লট ফেরত দেওয়ার আবেদন করেন মিসেস ওয়াহিদা হুদা। ওই আবেদনপত্র তিনি রাজউকের প্রচলিত বিধি-বিধান অনুসারে পূর্বাচল প্রকল্পের মূল অধিবাসী হিসেবে প্লট বরাদ্দ পাওয়া কথা দাবি করে লেখেন, ‘বরাদ্দকৃত প্লটের ক্ষেত্রে রাজউকের প্রচলিত বিধি বিধানের কোনোরূপ ব্যত্যয় হয়ে থাকলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে আমাকে পুরো বিষয়টি অবহিত করলে আমি রাজউক বরাবর প্লটটি সমর্পণ করতে প্রস্তুত আছি।’
এরপর ২৫ নভেম্বর পুনরায় অপর এক আবেদনপত্রে প্লটটি সমর্পণ করার সিদ্ধান্তের কথা জানান মিসেস ওয়াহিদা হুদা। ওই আবেদনপত্রে তিনি বলেন, ‘…বর্তমানে অধিকতর স্বচ্ছতার জন্য ও আমার স্বামীকে যাতে বিব্রতকর পরিস্থিতির সন্মুখীন হতে না হয়, সেজন্য প্লটটি রাজউক বরাবর সমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ওই দুই আবেদনপত্রের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ ডিসেম্বর মিসেস ওয়াহিদা হুদার আবেদনটি গ্রহণ করে রাজউক।
দুদকের কাছে থাকা অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, নূরুল হুদা রাজউকের চেয়ারম্যান থাকাকালে রাজধানীর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৯ নম্বর সেক্টরের ১০৩ নম্বর রোডে ১০ কাঠা আয়তনের একটি প্লট (প্লট নং-১৯) বরাদ্দ নেন। এ সময় স্ত্রী ওয়াহিদা হুদার নামে একই প্রকল্পের সেক্টর-৫, রোড-৩০৯, প্লট নং-৪৯ নম্বরে ৫ কাঠার আরেকটি প্লট বরাদ্দ নেন।
অনেক গ্রাহক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ কোটায় এ প্রকল্পে এখনো প্লট পাননি। কিন্তু নূরুল হুদা তার স্ত্রীকে গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলার ‘মূল অধিবাসী’ ও ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ দেখিয়ে ‘ক্ষতিগ্রস্ত কোটায়’ প্লটের বরাদ্দ নেন। অথচ রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায়ও নূরুল হুদা দম্পতির প্লট রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, স্বামীর নামে সরকারি প্লট থাকার পর আর স্ত্রীর নামে প্লট নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
Discussion about this post