বিডিলনিউজঃ বুধবার রাজ্যসভার অধিবেশনের শেষ দিনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত স্থলসীমান্ত চুক্তি বিলটি পেশ করে মনমোহন সরকার। বেলা আড়াইটা নাগাদ অতিরিক্ত কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে তা বিতরণ করা হয় সদস্যদের মধ্যে।
তবে এ প্রস্তাবের কড়া সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এই চুক্তি তিনি মানেন না উল্লেখ করে বলেছেন, রাজ্যের এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না। অধিবেশনে তৃণমূল ছাড়াও অগপ, বিজেপি, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে ও এডিএমকে সদস্যরাও এই বিলের প্রতিবাদ করেছেন।
বেলা আড়াইটা নাগাদ অতিরিক্ত কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে তা বিতরণ করা হয় সদস্যদের মধ্যে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা এর সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। বলেন, ‘রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়া একতরফাভাবে বিলটি পেশ করার অর্থ জোর করে একটি বিষয়, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, অসম, ত্রিপুরা এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির উপরেও চাপিয়ে দেয়া। আমরা এটা মানছি না, মানছি না, মানছি না। আমাদের রাজ্যের এক ইঞ্চি জমিও দেয়া হবে না।’
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ভারত সরকার দীর্ঘদিন ধরেই বিলটি ঝুলিয়ে রেখেছিল। অনেকদিন পর হঠাৎ করেই রাজসভার আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করল। এর কারণ হলো তারা বাংলাদেশকে দেখাতে চায়, তারা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে আছে। কিন্তু এ নিয়ে তৃণমূলসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল যেভাবে হৈ চৈ করেছে তা যথার্থ নয়। কেননা আলোচ্য সূচিতে উঠাতেই যদি এ অবস্থা হয় তাহলে আলোচনার পর পাস করানো কংগ্রেস সরকারের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে বলেও মনে করেন ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।
স্থল সীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত বিলটি অধিবেশনে উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইমতিয়াজ বলেন, মানুষ সেরকমই ভাবতে পারে। আর বন্ধু হিসেবে বেকায়দায় পড়া আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়াতে কংগ্রেস সরকার এমন উদ্যোগ নিতেই পারে। তাছাড়া কংগ্রেস চাইবেই এটি এগিয়ে নিতে। কেননা তাদের সময়েই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সমঝোতা হয়েছে। পাশাপাশি ভারতের মানুষকেও তারা নির্বাচনে পাশে পেতে চায় এই বলে যে,এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তারা ভূমিকা রেখেছে।
ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি অমীমাংসিত থাকার কারণে ১৬২টি ছিটমহলের পঞ্চাশ হাজারের বেশী নাগরিকের মানবিক সমস্যা সমাধানের বিষয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য অনিশ্চিত হয়েই থাকল।
এ প্রসঙ্গে, বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় আন্দোলনের বাংলাদেশ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা কুড়িগ্রাম থেকে জানিয়েছেন, দীর্ঘ ৬২ বছর ধরে ছিটমহলবাসীরা তাদের মৌলিক নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে তারা আন্দোলন আব্যাহত রাখবেন। তারা ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে প্রতিকার চেয়ে রিট আবেদন করবেন। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরিরও উদ্যোগ নিয়েছে দু’দেশের ছিটমহলবাসীরা।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তি থেকেই উদ্ভব ছিটমহল সমস্যা। বর্তমানে বাংলাদেশের সীমানর ভেতরে রয়েছে ভারতের ১১১টি ছিটমহল। আর ভারতের সীমানার অভ্যন্তরে রয়েছে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে। বাংলাদেশের ছিটমহলগুলোর অবস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কুচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলায়। আর ভারতীয় ছিটমহলগুলোর অধিকাংশই রয়েছে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারিতে।
Discussion about this post