একে এম নাজিম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ কতিপয় মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে হেফাজতের দেওয়া ৮৪ জনের তালিকা ধরেই একে একে ব্লগার হত্যা করা হচ্ছে মর্মে মনগড়া নিউজ করে ব্লগার হত্যার ঘটনায় হেফাজতে ইসলামকে জড়ানোর অপপ্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তিনি বলেন, আল্লাহ-রাসূলের বিরুদ্ধে অবমাননাকর কটূক্তি এবং ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে যেন মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে সরকার কঠোর আইন পাশ করে। যাতে করে ধর্মকে কেন্দ্র করে মানুষে মানুষে বিদ্বেষ, হিংসা, প্রতিশোধপরায়ণতা ও সহিংসতা জন্ম না নেয়। হেফাজতের ১৩ দফার মূল উদ্দেশ্যই ছিল বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিরাজমান সুন্দর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থান ও পারস্পরিক মমতাবোধটা যেন বিনষ্ট না হয়। যে কারণেই হেফাজতের ১৩ দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে দেশব্যাপী গণজোয়ার তৈরী হয়। হেফাজত কোন অবস্থাতেই আইন বহির্ভুত কর্মকান্ড ও সহিংস পরিস্থিতি সমর্থন করে না বলেই বার বার ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নের দাবী জানিয়ে আসছে।
হেফাজত আমীর বলেন, কারো ধর্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যঙ্গ করা, ঘৃণা ছড়ানো, হেয় করা কোন অবস্থাতেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়। যেমন স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার থাকা মানে অন্যের ধান ক্ষেত মাড়িয়ে যাওয়া নয়।
আমীরের প্রেসসচিব মাওলানা মুনির আহমদ স্বাক্ষরিত গতকাল (১১ আগস্ট, মঙ্গলবার) বিকেলে সংবাদপত্রে দেওয়া এক বিবৃতিতে হেফাজত আমীর বলেন, ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের গঠিত ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটিকে যে ৮৪ জন ব্লগারের তালিকা দেওয়া হয়, তা মাসিক আল-বাইয়্যিনাত ও দৈনিক আল-ইহসান পত্রিকার সম্পাদক এবং আনজুমানে আল-বাইয়্যিনাত-এর কেন্দ্রীয় আহবায়ক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম আরিফ এর নেতৃত্বে দেওয়া হয়েছিল। তিনি হেফাজতে ইসলামের কেউ নন এবং উক্ত বৈঠকে হেফাজতের কোন নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেননি। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকসহ প্রায় সকল গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে ৮৪ জন ব্লগারের তালিকা হেফাজত দিয়েছিল বলে যে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তক্যবাদি ও তাদের দোসররাই এমন মিথ্যাচারে জড়িত থাকতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে হেফাজত আমীর আরো বলেন, আমাদের ১৩ দফার মধ্যে অন্যতম দাবী ছিল, ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন পাশ এবং সে আইনের আওতায় বিচারের মাধ্যমে তাদের শাস্তি দেওয়া। যাতে কেউ কোন সম্প্রদায় বা ব্যক্তি বিশেষের অনুভুতিতে আঘাত হেনে দেশ ও সমাজে শান্তি বিনষ্ট করার অপপ্রয়াস চালাতে না পারে। তিনি বলেন, বর্তমানে কতিপয় মহল থেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু মতপ্রকাশের স্বাধীনতারও একটা সীমা আছে। অন্যের ধর্মবিশ্বাসকে কেউ হেয় করতে পারে না। অন্যের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে মশকরা করা যায় না। কারো ধর্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যঙ্গ করা, ঘৃণা ছড়ানো কোন অবস্থাতেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়। কেউ যদি কারো মাকে গালি দেয়, কারো কন্যাকে গালি দেয়, অবশ্যই এতে কঠোর প্রতিক্রিয়া তৈরী হবে। তাই আমরা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে বার বার দাবী জানিয়ে আসছি যে, কেউ যাতে অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে সহিংস কর্মকান্ডে কাউকে প্ররোচিত করতে না পারে, তার জন্য কঠোর আইন থাকা দরকার। তিনি বলেন, সম্প্রতি পুলিশের আইজি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ব্লগারদেরকে সীমালঙ্ঘন না করতে এবং ধর্ম অবমানামূলক উক্তি থেকে বিরত থাকার আহ্বানেই প্রমাণিত হয়, হেফাজতের দাবীর যৌক্তিতা এখন তারাও উপলব্ধি করেন। তিনি বলেন, চুরি বা ডাকাতির হাত থেকে সম্পদ রক্ষায় পর্যাপ্ত সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে বলার মানে চোর বা ডাকাতকে সমর্থন করা নয়।
বিবৃতিতে হেফাজত আমীর আরো বলেন, হেফাজতে ইসলামসহ এদেশের উলামা-মাশায়েখ, ক্বওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা শান্তিতে বিশ্বাসী। কারণ, ইসলাম আমাদেরকে শান্তি, সাম্য, সহনশীলতা ও ইনসাফের শিক্ষা দেয়। আমরা কখনোই আইনকে নিজের হাতে তুলে নেওয়া বা কোন ধরণের বিচারবহির্ভূত সহিংস কর্মকান্ড সমর্থন করি না। হেফাজতে ইসলাম খুন, গুম, অপহরণসহ সকল বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ডের নিন্দা করে। আমরা সব সময় জনসাধারণকে অন্যায়, অপরাধ, জোর-জুলুম ও সহিংস কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার প্রতি আহ্বান জানাই। আমরা চাই, ব্লগার হত্যাসহ সব ধরণের বিচারবহির্ভুত সহিংসতা ও হত্যাকান্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। পাশাপাশি কেউ যাতে বাক স্বাধীনতার অপব্যবহার করে ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তি করে সহিংস কর্মকান্ডে অন্যকে প্ররোচিত করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন পাশ করা হোক। সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যেমন কঠোর আইনি পদক্ষেপ প্রয়োজন, তেমনি অন্যের ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতিতে আঘাত হেনে সহিংসতায় উস্কানীদাতাদের বিরুদ্ধেও সমান কঠোরতা জরুরী। হেফাজত আমীর ইসলাম অবমানা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোয় জড়িত ব্লগারদেকে কতিপয় মিডিয়ায় বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও মুক্তমনা বলে পরিচিত করার প্রয়াসের উল্লেখ করে বলেন, এটাও ধর্ম অবমাননাকারীদেরকে প্ররোচিত করার শামিল। তিনি বলেন, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে সরকারকে এসব বিষয়ে সতর্ক ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।
Discussion about this post