রিয়াজ উদ্দিন রিপনঃ
২ গ্লাস হরলিক্স = ৬৬৬ গ্রাম ইলিশ মাছের সমান আয়রন
দুধে হরলিক্স মেশাও, দুধের শক্তি বাড়াও
হরলিক্স বাচ্চাদের বানায় “ টলার, স্ট্রংগার, শার্পার
বেড়ে ওঠার ডোজ, রোজ রোজ…!
দিনের একটি ছোট সময়ও যারা টিভি সেটের সামনে বসেন কিংবা সকালে চা খেতে খেতে পত্রিকার পাতায় নিয়মিত চোখ বুলান উপরের কথাগুলো তাঁদের মুখস্ত হয়ে যাওয়ার কথা। কারণ, আমাদের দেশের পত্রপত্রিকা আর টিভি চ্যানেলে যত বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয় তার একটি বিশাল অংশ জুড়েই রয়েছে হরলিক্স তথা শিশুখাদ্যের বিকল্প সাপ্লিমেন্টের বিজ্ঞাপন।
আমার নিজের ভাতিজি হরলিক্সের বিজ্ঞাপনের আওয়াজ শুনলে দৌড়ে চলে আসে এবং উপরের মহান বানীগুলোর বেশ কয়েকটা তারও টুটস্ত। যদিও, হরলিক্সের “গুনগান” সম্পর্কে অবহিত করার পর এখন তার হরলিক্স পাণে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। এখানে নিজের ভাতিজিকে দিয়ে আমি সমগ্র বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ শিশুদের তুলে ধরেছি, যারা হরলিক্সের চটকদার বিজ্ঞাপনের মূল টার্গেট। আর, অভিভাবকেরা…?
দিনে রাতে অবিরাম পত্রিকার পাতাই আর টিভির পর্দায় যদি ডাক্তারি এপ্রোন পড়া কাউকে বলতে শুনেন “হরলিক্স বাচ্চাদের বানায়, টলার, স্ট্রংগার, শার্পার” তাহলে বিভ্রান্ত না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। তাছাড়া, পাশের বাসার ভাবীর কাছ থেকে “হরলিক্স তো রেগুলার খাবার, কেন আপনি দেন না?” এই প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার ভয় তো আছেই!
যেই হরলিক্স নিয়ে এতো তুলকালাম, আসুন জেনে নিই সেই হরলিক্সের নারী নক্ষত্র…
প্রথমেই বলে নিই হরলিকস হচ্ছে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের পণ্য, শুরুতে যেসব গুণগান করেছিলাম তার লেশমাত্র নেই হরলিক্সের অফিসিয়াল সাইটে,
দেখতে পারেন নিচের লিংকগুলো…
http://www.horlicks.co.uk/health/
http://en.wikipedia.org/wiki/Horlicks
http://www.gsk.com.bd/products/
http://gsk-ch.in/Products.aspx
এবার আসি হরলিক্স যেভাবে বানানো হয়-
হরলিকসের বোতলের গায়ে লাগানো লেভেলের ভাষা অনুযায়ী এর উপাদানগুলো হচ্ছে মল্টেড বার্লি,গমের দানা,শুকনো skimmed দুধ, ঘোল, চিনি আর ভেজিটেবল ফ্যাট। বার্লিতে গুটেন কম থাকে।তাই বার্লি থেকে রূটি,কিংবা পাউরূটি ও বানানো যায় না। পশু খাদ্য হিসেবেই বার্লি ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। এই বার্লিকে গ্যাজিয়ে শুকানো হয়। ঐ শুকনো বার্লির দানাকে গুঁড়ো করে ছেকে নেওয়া হয়। তার সাথে মেশানো হয় ভেজিটেবল ফ্যাট, দুধ, চিনি আর খনিজ লবণ। এই মিশ্রণকে শুকিয়ে নিলেই তৈরি হরলিকস।
আপনি যদি নিয়মিত প্রিন্ট মিডিয়া অথবা ইলেক্ট্রিক মিডিয়ার বিজ্ঞাপনগুলো দেখে থাকেন তাহলে দেখবেন আপনি যাই খাবেন অথবা মাখবেন তার মধ্যেই ভিটামিন অথবা মিনারেল রয়েছে অথবা দুটো এক সঙ্গেই আছে। বিজ্ঞাপনগুলো দেখে আপনার মনে হতে পারে ভিটামিন এবং মিনারেল খুবই দুর্লভ বস্তু এবং আপনাকে ভিটামিন এবং মিনারেল বিশাল পরিমানে ফুড সাপ্লিমেন্ট (খাবারের সম্পূরক)আকারে নিতে হবে।
চলুন ভিটামিন এবং মিনারেল সম্পর্কে কিছুটা জানা যাক।
ভিটামিন
ভিটামিন হচ্ছে জৈবিক পদার্থ যা মানুষের জন্য খুব কম পরিমানে প্রয়োজন হয় শরীরের নির্দিষ্ট কিছু কোষের কাজ সম্পাদনের জন্য। মানুষের দেহ ভিটামিন তৈরী করতে পারে না, সুস্বাস্থের জন্য ভিটামিনগুলোকে আমাদের প্রতিদিনের খাবারের সাথে নিতে হয়।
মিনারেল
মিনারেল হচ্ছে অজৈবিক যা মানুষের দেহের গঠনমূলক পদার্থ, এটি এনজাইম এর বিশ্লেষনে সহকারি হিসেবে কাজ করে, স্নায়ুর সঞ্ছালনে সাহায্য করে, অম্ল এবং ক্ষারকের সাম্যবস্থা রক্ষা করে । মানুষের দেহ মিনারেল তৈরী করতে পারে না, প্রত্যেকটি মিনারেল প্রতিদিন খাবারের সাথে একটি নির্দিষ্ট পরিমানে নিতে হয়।
আমাদের প্রতিদিন আসলে কতটুকু শক্তির প্রয়োজন?
ক্যালরির মাপে আমাদের প্রতিদিনের শক্তির চাহিদাটা এরকম :
মাঝারি খাটাখাটনির পুরুষ ২৭০০/২৮০০ কিলোক্যালরি, একই ধরনের মহিলা ২২০০ কিলোক্যালরি,কিশোর-২৪০০/২৫০০ কিলোক্যালরি, আর ৪-৫ বছরের বাচ্চা-১৫০০ কিলোক্যালরি। আপনার ঠিক কতটুকু শক্তির দরকার সেটা আপনি নিজেই মেপে নিতে পারেন(http://mpgnarratives.hubpages.com/hub/How-many-calories-do-we-need -এই ওয়েবসাইটে বিস্তারিত বলা আছে)
FDA(Food & Drug Administration-America) নির্দেশনা
“There are many good reasons to consider taking vitamin supplements, such as over-the-counter multivitamins. According to the American Academy of Family Physicians (AAFP), a doctor may recommend that you take them:
• for certain health problems
• if you eat a vegetarian or vegan diet
• if you are pregnant or breastfeeding
supplements may be useful when they fill a specific identified nutrient gap that cannot or is not otherwise being met by individual’s intake of food.”
অর্থাৎ, ভিটামিগুলো সাপ্লিমেন্ট আকারে উপরে উল্লেখিত কন্ডিশনে উপকারি হতে পারে কিন্তু এর উপকারিতা প্রমানিত নয়। আর নরমাল কন্ডিশনে তো নেয়ার প্রশ্নই আসে না। আরো ভয়ংকর তথ্য আছেঃ
“As is the case with all dietary supplements, the decision to use supplemental vitamins should not be taken lightly, says Vasilos Frankos, Ph.D., Director of FDA’s Division of Dietary Supplement Programs”.
যদি ভিটামিগুলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেওয়া তাহলে এটা প্রমানিত যে আপনার নিম্ন বর্নিত সমস্যাগুলো হতে পারেঃ
Fat-soluble Vitamins
• A (retinol, retinal, retinoic acid): Nausea, vomiting, headache, dizziness, blurred vision, clumsiness, birth defects, liver problems, possible risk of osteoporosis. You may be at greater risk of these effects if you drink high amounts of alcohol or you have liver problems, high cholesterol levels or don’t get enough protein.
• D (calciferol): Nausea, vomiting, poor appetite, constipation, weakness, weight loss, confusion, heart rhythm problems, deposits of calcium and phosphate in soft tissues. If you take blood thinners, talk to your doctor before taking vitamin E or vitamin K pills.
Water-soluble Vitamins
• B-3 (niacin): flushing, redness of the skin, upset stomach.
• B-6 (pyridoxine, pyridoxal, and pyridoxamine): Nerve damage to the limbs, which may cause numbness, trouble walking, and pain.
• C (ascorbic acid): Upset stomach, kidney stones, increased iron absorption.
• Folic Acid (folate): High levels may, especially in older adults, hide signs of B-12 deficiency, a condition that can cause nerve damage.[1]
অর্থাৎ আপনার যকৃৎ নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে, প্যারালাইজড, হার্ট এর সমস্যা হতে পারে।
(চলবে)
Discussion about this post