প্রধানমন্ত্রীর অধীনে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে আগামী নির্বাচন হতে পারে বলে সম্প্রতি হাইকোর্ট যে রূপরেখা দিয়েছে সেটিকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে বর্ণনা করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
শনিবার ঢাকায় বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে আইনমন্ত্রী বলেন,“সংবিধানে যা লেখা আছে, সেটা না বদলিয়ে কেউ যদি বলে এটার বিপরীত কিছু করতে হবে, সেটা গ্রহণযোগ্য যে নয় তা শুধু না, সেটা অসাংবিধানিক।”
গত বছরের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দুটি রিট দায়ের করা হয়েছিল।
গতবছর রিটগুলো আদালত খারিজ করে দিলেও সম্প্রতি তার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদালত তার রায়ে আগামী নির্বাচন নিয়ে একটি রূপরেখা বা ফর্মুলা দিয়েছে।
বিভিন্ন খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে দুটি ফর্মুলা দিয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী হাইকোর্ট প্রথম ফর্মুলায় বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা দলগুলো থেকে ভোটের হারের অনুপাতে নতুন ৫০ জন মন্ত্রী নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ওই সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন করবেন।
হাইকোর্টের দ্বিতীয় ফর্মুলায় বলা হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ দল প্রথম চার বছর ক্ষমতায় থাকবে। আর সংসদের প্রধান বিরোধী দল সর্বশেষ এক বছর ক্ষমতায় থাকবে।
হাইকোর্ট যে রূপরেখা দিয়েছে সেটিকে সরকার বিবেচনা করতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “আমার মনে হয় না হাইকোর্ট এ ধরনের প্রস্তাব দিতে পারে।”
আইনমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্টের রায় যদি ডাইরেকটিভ (নির্দেশনামূলক) হয় তাহলে সেটি অসাংবিধানিক। যদি অবসারভেশন (পর্যবেক্ষণ) হয় তাহলে সেটা সেই আলোকেই দেখা হবে।
বাংলাদেশ সংলাপে অংশ নেয়া বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রূপরেখাকে তেমন কোনো গুরুত্ব দেননি। নোমান মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোকেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
নোমান বলেন ,“এখানে কোর্ট অথবা পার্লামেন্টে ৫০ জনকে সিলেক্ট করে, তাদের মাধ্যমে কোনো সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি মনে করি না।”
তবে অনুষ্ঠানের আরেকজন প্যানেলিস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে হাইকোর্ট যদি কোনো প্রস্তাব করে তাহলে সেটিও আমলে নেয়া উচিত।
অধ্যাপক ইসলাম বলেন , “সবাই এখন চায় যে নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়। তবে সে সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারবো না। এটা নিতে হবে জনপ্রতিনিধিদের এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে।”
একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করার প্রস্তাবও দিচ্ছেন অনেক।
সম্প্রতি কয়েকটি নাগরিক সংগঠনের দিকে থেকে বলা হয়েছে, গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কিছুটা কমিয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা যেতে পারে।
তবে এ ধরনের প্রস্তাবের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন আরেকজন প্যানেলিস্ট যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান।
তিনি মনে করেন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ালে দেশে ‘দ্বৈতশাসনের’ পথ তৈরি হতে পারে। অধ্যাপক জাহান এক্ষেত্রে পাকিস্তানের উদাহরণ তুলে ধরেন। -বিবিসি
Discussion about this post