চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় হাইকোর্টের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের ১০ স্বজনের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আসামিপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. মোয়াজ্জাম হোসেন ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তাদের ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
আদালতে এদিন আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম। সঙ্গে ছিলেন আবদুর রাজ্জাক রাজু ও শামীমা ইসলাম মৌ। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত রায়।
উল্লেখ্য, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান বিধান বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ইউনিয়ানের আড়ুয়াকান্দি গ্রামের একটি মন্দির থেকে একশ ৬০ ভোল্টের সোলার পানেল চুরির পর তা নিজ শ্বশুর বাড়িতে স্থাপন এবং ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে সরকারি জায়গা থেকে ৪টি গাছ কেটে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের বিষয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর গত ৩১ আগষ্ট আদালতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আদালতে তার দেয়া বক্তব্য নিয়ে ওইদিন এবং পরদিন ১ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর স্থানীয় প্রশাসন ওই চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করে।
এ ঘটনার পর সেখানে বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুরের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে কতিপয় ব্যক্তি। এই মানবন্ধনের ছবি ও দাবিনামা ফেসবুকে দেয়া হয়।
এ অবস্থায় বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সম্মানহানির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুজিত চ্যাটার্জি গত ৫ সেপ্টেম্বর শাহবাগ থানায় কদমবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান বিধান বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন।
এছাড়া হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী মোশতাক আহমেদ ও দক্ষিণ কেরানিগঞ্জের বাসিন্দা মো. ইশতিয়াক আহমদ। এ রিট আবদনের ওপর গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি জে এন দেব চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ দেন।
পরিবারের যেসব সদস্য ও স্বজন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী ইউনিয়নে বসবাসরত তাদের নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দেন।
ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে করা মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী ৩৭ জনের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক, মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপার, রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং ওই থানার পুলিশের উপপরিদর্শক সদানন্দ বৈদ্যকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
আদালত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি রুল জারি করেন। রুলে বিচারপতির কর্তৃত্ব, সম্মান ও মর্যাদাকে হেয় করে করা বেআইনী সমাবেশ (মানববন্ধন) ঠেকাতে ১৩ বিবাদীর ব্যর্থতাকে কেন তাদের ইচ্ছাকৃত ব্যর্থতা ও পেশাগত ও বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালনে অবহেলা হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
পাশাপাশি ওই বেআইনি সমাবেশের সদস্য, সংগঠক, উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং দুর্দশাগ্রস্ত ও দরিদ্র নারীদের জন্য দেওয়া ভিজিডির চাল আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে কেন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
জনপ্রশাসন সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, খাদ্য সচিব, বন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, মাদারিপুরের ডিসি ও এসপি, রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশের উপ-পরিদর্শক সদানন্দ বৈদ্যসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্টের এই আদেশের পর সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বিধান বিশ্বাসের অনুসারী হিসেবে পরিচিত বিপ্লব রায় বাদী হয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজৈর থানায় বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের ওই ১০ স্বজনকে আসামি করে মামলা করেন।
Discussion about this post