বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের আশপাশে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ২৪টি প্রতিষ্ঠান লাল শ্রেণিভুক্ত, যা পরিবেশের জন্য ব্যাপকভাবে হুমকিস্বরূপ এবং এসব প্রতিষ্ঠান ওই এলাকায় থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।
এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে শুনানির জন্য আগামী ৮ মে দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাখিল করা প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে, যার মধ্যে ২৪টি লাল ও বাকিগুলো কমলা ও সবুজ শ্রেণির। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টি প্রতিষ্ঠান পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।
প্রতিবেদন দাখিলের পর আদালত বলেছেন, ১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্টের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পরিবেশগত প্রতিপন্ন এলাকায় লাল শ্রেণির শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকার সুযোগ নেই। কারণ, এগুলো মাটি, পানি ও বায়ু ব্যাপকভাবে দূষিত করে। পরে এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ৮ মে পরবর্তী সময়ে শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন।
এর আগে গত বছর ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট সুন্দরবনের আশপাশে নতুন শিল্পকারখানা অনুমোদনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
একই সঙ্গে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শিল্পকারখানা স্থাপনের অনুমোদন কেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্টের প্রজ্ঞাপনের লঙ্ঘন হবে না এবং নতুন শিল্পকারখানা কেন অপসারণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। এ ছাড়া ওই ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বর্তমানে কতগুলো শিল্পকারখানা রয়েছে, তার তালিকা ছয় মাসের মধ্যে দাখিলে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন আদালত।
সুন্দরবনের আশপাশে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা শিল্পকারখানা অন্যত্র সরিয়ে নিতে ‘সেভ দ্য সুন্দরবন’ ফাউন্ডেশনের সভাপতি শেখ ফরিদুল ইসলাম গত বছরের ৪ এপ্রিল হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন।
রিটে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও বরগুনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপারকে (এসপি) বিবাদী করা হয়।
রিট আবেদনটিতে বলা হয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন এবং এর চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। এ প্রজ্ঞাপন অনুসারে, সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকায় ভূমি, পানি, বায়ু ও শব্দদূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না।
পরিবেশ অধিদপ্তর এরই মধ্যে প্রায় ১৫০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প করার জন্য অবস্থানগত ছাড়পত্র দিয়েছে।
যার মধ্যে জাহাজভাঙা শিল্পসহ পরিবেশদূষণকারী প্রকল্প রয়েছে বলেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এসব শিল্পকারখানা স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ ও পরিবেশ আইন ১৯৯৫-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তা ছাড়া এসব শিল্পকারাখানা সুন্দরবনের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে রিটে দাবি করা হয়।
Discussion about this post