দিনাজপুরের হিলিতে বিয়ের তিন মাসের মাথায় যৌতুকের দাবিতে উম্মে কুলসুমা বেগম (২০) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত স্বামী ও শাশুড়িকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (৫ জুন) রাতে অভিযুক্ত দুইজনকে আটক করা হয়। হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সবুর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত কুলসুমা বেগম বিরামপুর উপজেলার ধানগড়া গ্রামের আফতাব উদ্দিনের মেয়ে। আর অভিযুক্ত স্বামী সাজ্জাদ হোসেন (২৪) ও রোকসানা বেগম (৪৫) হাকিমপুর উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে চন্ডিপুর এলাকায় কুলসুমা বেগমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকালে নিহতের বাবা আফতাব উদ্দিন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের আগেই পুলিশ সাজ্জাদ হোসেন ও তার মা রোকসানা বেগমকে আটক করে। তবে শ্বশুর পালিয়ে যাওয়ায় তাকে এখনও আটক করা যায়নি।
নিহতের মামা আব্দুল জলিল জানান, তিন মাস আগে সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে কুলসুমা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের ৯০ হাজার টাকা ও দশ হাজার টাকার সোনার গহনা দিতে সাজ্জাদ হোসেন তার শশুর আফতাব উদ্দিনকে চাপ দিতে থাকে। যৌতুক না পেয়ে সাজ্জাদ হোসেন কুলসুমা বেগমকে প্রায়ই মারধর করতো। কুলসুমা বেগমের সংসারের দিকে তাকিয়ে কাউকে বিষয়টি জানানো হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘সোমবার রাতে সাজ্জাদ হোসেন ও তার বাবা-মার নির্যাতনে কুলসুমা মারা যান। পরে সাজ্জাদ হোসেন ও তার বাবা-মা কুলসুমার লাশ ঘরের বর্গার সঙ্গে ওড়না দিয়ে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচারণা চালায়। রাত ১টার দিকে সাজ্জাদের বাবা কুলসুমার বাবাকে ফোন দিয়ে জানায়, কুলসুমা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’
অভিযুক্ত রোকসানা বেগম বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যায় কুলসুমাকে সঙ্গে নিয়ে ইফতার করি। বাড়িতে কোনও গণ্ডগোল ছিল না। পরে তারাবির নামাজ শেষে আমি কুলসুমাকে বাড়িতে রেখে বাড়ির কাছে থাকা নিজেদের দোকানে গিয়ে বসি। সাজ্জাদ ও তার বাবা তখন বাসায় ছিল না, তারা বন্দরে কাজে ছিল। রাতে বাসায় ফিরে দেখি, কুলসুমা বাঁশের সঙ্গে ওড়না জড়িয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তাররা মৃত বলে ঘোষণা দেন।’
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. ওয়াসিফ হোসেন বলেন, ‘কুলসুমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমি নিশ্চিত হই, সে অনেক আগেই মারা গেছে। কুলসুমার গলায় দাগ ছিল, তবে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার অন্য কোনও নিদর্শন দেখতে পাইনি।’
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল বলেন, ‘মরদেহের ডান হাতে, গলার বাম পাশে, থুতনির নিচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’ ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ওসি আব্দুস সবুর বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, কুলসুমাকে পিটিয়ে হত্যা করে পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়। আত্মহত্যার আলামত পাওয়া যায়নি। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে সাজ্জাদ হোসেন ও তার বাবা-মা প্রায়ই কুলসুমাকে মারপিট করতো বলে শুনেছি।’
Discussion about this post