বিডি ল নিউজঃ গুগল প্লে স্টোর থেকে রিদ্মিক এবং ইউনিবিজয় কীবোর্ড অপসারণের প্রেক্ষাপটে হুমকির মুখে পড়েছেন বিজয় কী-বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা জব্বার। তাঁকে ফোনে এবং ফেসবুকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে প্রিয়.কমকে জানিয়েছেন। তবে এতে তিনি ভয় পাচ্ছেন না। মোস্তফা জব্বার বলছেন, যারা ইনবক্সে হুমকি দিচ্ছেন তাদের জন্য বলছি, একাত্তরে মরণের হাত থেকে ফিরে এসেছি-ভয় দেখাবেন না।
অন্য এক স্ট্যাটাসে মোস্তফা জব্বার লিখেছেন, বাবা-মা চৌদ্দ গোষ্ঠী ধরে গালিগালাজ করছে কেউ কেউ। এটি নতুন না। আমার একটাই অপরাধ, আমি কাউকে আমার বিজয় কী-বোর্ড বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করতে দিলাম না কেন? ২৮ বছর আগে যখন এদের কারও কারও জন্মও হয়নি তখন বাংলা লেখার একটি কী-বোর্ড প্রণয়ন করে এতো বছর পর সুন্দর সুন্দর বাক্য শুনবো ভাবতেই পারিনি। স্রষ্টা এদেরকে ভাল রাখুন। এই জীবনে আর একটি সৃজনশীল কাজ করার কোন ইচ্ছাই হচ্ছেনা। তিনি সর্বশেষ স্ট্যাটাসে আক্ষেপ করে লিখেছেন, কোন দেশ, কোন ভাষার জন্য এতো সময় দিলাম?
মোস্তফা জব্বারের এসব স্ট্যাটাসে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে অধিকাংশরাই তাঁর বিপক্ষে অবস্থান করতে দেখা গেছে। মাহিন রায় লিখেছেন, আমার উচ্চমাধ্যমিকে ঐচ্ছিক বিষয় ছিলো শর্টহ্যান্ড-টাইপ। সেই সুবাদে আমি প্রথম বাংলা টাইপ করা শিখি সনাতন টাইপরাইটারে। এর কারণে পরে কম্পিউটারে টাইপ করাটা আমার জন্য সহজ হয়। তো পয়েন্ট হলো, আপনার বিজয় কিবোর্ড লেআউট তো আপনি নিয়েছেন সেই সনাতন টাইপরাইটারের লেআউট থেকে। আপনারটা যদি চুরি না হয়ে থাকে তবে বাকিদেরটাকে আপনি চুরি বা কপি বলছেন কি করে? উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইংলিশ ডিফল্ট কিবোর্ডের কথা। সব অ্যাপ তো সমানে সেই লেআউট ব্যবহার করছে। সবাই কি তবে চুরি করছে?
বিবর্ণ বর্ণিল লিখেছেন, স্যার খারাপ ভাবে নিবেন না। আপনাকে অনেক সম্মান করি। আপনাকে অনেকে রাজনৈতিক ভাবে হেয় করসে বুঝতে পারছি। তাই আমার একটা মতামত হল দয়া করে আপনি ইউনিজয় এর সাথে ফনেটিক যোগ করুন। আমি রিদ্মিক এ অভ্র আর ইউনিজয় দুইটাই একসাথে ব্যবহার করতে করতে কিছুটা জানি ইউনিজয় এর উপকারিতা। তবে ঢালাও ভাবে ইউনিজয় ব্যবহার করা এই নতুন প্রজন্মের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আমরা বাংলা লেখা শিখেছি ফনেটিক এর হাত ধরে, এখন জোর করে আমাদের ইউনিজয় এর মত কঠিন বাংলা লে আউট ধরিয়ে দিলে তো মানবে না কেউ। আর এখন রিদ্মিক বাইরে চলে গেছে, শুধু ফনেটিক নিয়ে যদি আবার আসে, তাহলে তো আপনার অ্যাপ আরো মানুষ ব্যবহার করতে চাইবে না। আর অবশ্যই ভালো ডেভেলপার দিয়ে ডেভেলপ করান বিজয় কী-বোর্ড। খুব বাজে হয়েছে। জানি একদম প্রাথমিক অবস্থা তবুও দ্রুত কিছু করুন, নাহলে আরো নেগেটিভ মন্তব্য পাবেন। ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটবে আশা রাখি।
ফরহাদ হোসেন লিখেছেন, আপনার অ্যাপের ইউআই আর হলপ্রিন্ট সিনেমা একি কথা। পারফর্মেন্সের ব্যাপারে নাহয় নাই বা বললাম। এটা একজন সাধারণ ব্যবহারকারী হিসেবে মতামত দিলাম।
মোস্তফা জব্বারের বিজয় অ্যাপ কিছুদিন আগে গুগল প্লে স্টোরে আত্মপ্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সেখানেও প্রায় অধিকাংশ মানুষ এটার বিপক্ষে রিভিউ দিয়েছে। প্লে স্টোরে এক রিভিউদাতা লিখেছেন, এই ধরণের বাজে গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস, বাজে ফিচার সম্বলিত এপ এখন পর্যন্ত প্লে স্টোরে খুব কমই দেখেছি, সেটা যে কোন ল্যাঙ্গুয়েজ এরই হোক। কি-বোর্ডের প্রত্যেকটা বোতাম ঝাপসা । এবং, বাংলা লেখার ক্ষেত্রে এর চেয়ে কষ্টকর আর কোন এপ নেই। এই এপ দিয়ে বাংলা লেখার জন্য আপনাকে যতটুকু কষ্ট করতে হবে, “তেরো নদী-সাত সমুদ্র” পার হতেও আপনার এতো কষ্ট হবে না। যেহেতু, নেগেটিভ রেটিং এর কোন সুযোগ নেই, ওয়ান স্টার দিতেই হচ্ছে যদিও এই ধরণের বাজে কিবোর্ড ওয়ান স্টারও ডিসার্ব করে না।
এদিকে রিদ্মিক কী-বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন, রিদ্মিক কীবোর্ড হারিয়ে যাবে না। Google Play তেই আবার আসবে, আশা রাখুন। আর যদি কোন কারনে না আসে, তবে আপনি যাতে সহজভাবে এটি পেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হবে। যারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন: বিজয় লেআউটের কপিরাইট লংঘনের অভিযোগ পেয়ে গুগল এটি প্লে স্টোর থেকে সরিয়ে দিয়েছে। যদিও রিদ্মিক কীবোর্ডে বিজয় লেআউট ব্যবহার করা হয় নি, ব্যবহার করা হয়েছে অভ্র ফোনেটিক, QWERTY, জাতীয় ও ইউনিজয়।
মোস্তফা জব্বারকে হুমকি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাকে শুধু গালিগালাজ নয়; শারীরিকভাবে ক্ষতি করারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে ফেসবুকে পরে ফোনেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি এখনই কোন আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।
সূত্রঃ প্রিয়
Discussion about this post