বিডি ল নিউজঃ সকল ঝড় সামলে মানুষই আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। সকল হারানোর ব্যথা ভুলে মানুষই ফের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত মডেল ও চিত্রনায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপী ও ক্রিকেটার রুবেলের জীবনের ঝড় আমাদেরও নাড়া দিয়েছে। তাদের দুজনের দুটি পথ দু’দিকে বেঁকে গেছে। নতুন জীবনের পথে সূচনার আগে বদলে যাওয়া হ্যাপীর মুখোমুখি হয়েছে প্রিয়.কম…
এখন সবাই হ্যাপীকে চিনেন এক নামে। কিন্তু এই হ্যাপী কিন্তু আগে এতটা জনপ্রিয় ছিলেন না। নায়িকা হ্যাপী নাজনীনের নাম নিলে স্মরণ করিয়ে দিতো তার ছবির নাম। বলতো হতো-আরে চিনলেন না? ঐ যে মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘কিছু আশা কিছু ভালোবাসা’ ছবিতে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছে যে মেয়েটা, শাবনুরের আদরের ছোটবোন চরিত্রে। হ্যা সেই মেয়টাই হ্যাপী। অথচ আজ সবাই চেনেন হ্যাপীকে। খুব একটা বেশিদিনের ব্যবধান নয়, মাত্র কয়েকটা মাস। ভালভাবে বলতে গেলে একটি দিন মাত্র। ১৩ই ডিসেম্বর। যেদিন হ্যাপী রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তারপর থেকেই সারাদেশের মানুষ চিনেন হ্যাপীকে।
মামলা মোকাদ্দমা আর হ্যাপীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পের আগে হ্যাপী সম্পর্কে কি জানতে চান পাঠক? চলুন তাহলে।
হ্যাপীর জন্ম বাগেরহাটে। বাবা একজন আর্মি অফিসার। ফলে কর্মস্থল পরিবর্তন করতে হয়েছে বারবার। ছোট্ট হ্যাপী বাবার মার সঙ্গে ঘুরেছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। স্কুলের পড়ালেখা শেষ করতেই পা মাড়াতে হয়েছে ১১টি স্কুল। কত মানুষ, কত বন্ধু, আর কত নতুন জায়গার সংস্পর্শে অল্প বয়সেই হ্যাপীর অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে ওঠে। বুঝতে শেখেন নিজেকে। স্বপ্ন দেখতে থাকেন । ভবিষ্যতে কি করবেন না করবেন তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার আগেই হ্যাপী পড়ে যান নিজের প্রেমে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতেন ইশ! আমি যদি নায়িকা হতে পারতাম? যেমন ভাবনা তেমন কাজ। কখনো বাবার শার্ট, কখনো মার শাড়ি পড়ে দাঁড়াতেন আয়নার সামনে। নিজের প্রিয় নায়িকা মৌসুমী আর শাবনুরের মতো করে ডায়লগ আওড়াতেন। এভাবেই স্বপ্নের আকাশে ডানা মেলেন হ্যাপী। নিজেকে গড়ার সংগ্রামে নামেন তিনি। মা তাকে শেখান নাচ। যখন যে এলাকায় থাকতেন তখন সেই এলাকার কোন নাচের শিক্ষক রেখে দিতেন হ্যাপীর জন্য। এভাবেই আস্তে আস্তে নিজেকে গড়ে তুলেন হ্যাপী।
স্বপ্নের নাগাল পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয় নি তাকে। ফেসবুকের কল্যাণে জুটে যায় মডেলিং করার প্রস্তাব। একটি টিভিসিতে কাজ করেন তিনি, বেশকিছু মিউজিক ভিডিওতেও অভিনয় করেন। এরপর আবারও ফেসবুক। পেয়ে গেলেন গুণী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিককে। তারপরের গল্প তো সবার জানা।
২০১৩ সালে মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘কিছু আশা কিছু ভালোবাসা’ ছবি দিয়ে বড়পর্দায় অভিষেক হয় তার। এরপর বদরুল আমিন পরিচালিত রিয়েলম্যান ছবিতে কাজ করেন তিনি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এসে ক্রিকেটার রুবেলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলা করলে রাতারাতি আলোচিত হয়ে ওঠেন হ্যাপী। রুবেলকে জড়িয়ে বিতর্ক তৈরির অনেক আগে থেকেই ছবি করা বাদ দেন। হ্যাপী সেসময়ে এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন রুবেলের কারণেই চলচ্চিত্র ছাড়তে চান তিনি। কিন্তু নানা ঝামেলা শেষে এখন হ্যাপী ভুলে যেতে যান রুবেল অধ্যায়। আবারো কাজে ফিরে আসার ঘোষণা দেন তিনি। একটি মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের মাধ্যমে গত মাসে কাজে ফিরেন হ্যাপী। এবার চুক্তিবদ্ধ হলেন নতুন ছবিতে।
কাশেম মন্ডল পরিচালিত ‘নীল দৃষ্টি’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন সম্প্রতি। ২৮ এপ্রিল ছবিটির শুটিং শুরু হবে গাজীপুরের হোতাপাড়ায়। ছবিতে হ্যাপীর বিপরীতে থাকবেন দুই নবাগত নায়ক সালেম রাতুল ও সাফায়েত খান।
চলচ্চিত্রে আবারো নিয়মিত হওয়া প্রসঙ্গে হ্যাপী বলেন, ‘আর কত? অনেকদিনই তো অভিনয় থেকে বাইরে থাকলাম। যার অনুরোধে অভিনয় ছেড়ে দিয়েছিলাম সেই তো প্রতারণা করলো। এখন সবভুলে আবারো অভিনয়ে নিয়মিত হতে চাই।’
ছবি তো শুরু করলেন, কিন্তু রুবেলের বিরুদ্ধে মামলার কি খবর? ‘দেখুন ক্যারিয়ারের সঙ্গে আমার মামলার কোন সম্পর্ক নেই। ক্যারিয়ার ক্যারিয়ারের মতো চলবে আর মামলা মামলার মতো চলবে। দুটোই সমানতালে চালিয়ে যাবো।’
মামলার প্রতিবেদন তো রুবেলের পক্ষে গিয়েছে, এখন কি করবেন? জবাবে হ্যাপী বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি রুবেলের প্রতি আবেগী হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমি আর মামলা চালাবো না। এ কারণে কোনো প্রমাণ দাখিল করি নাই। ফলে রুবেলের পক্ষে মামলার প্রতিবেদন চলে গিয়েছে। এখন বুঝতে পেরেছি, সেই আবেগী সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ঠিক হয় নাই। আর এরই মধ্যে স্কাইপির মাধ্যমে রুবেল আমাকে মামলা থামাতে থ্রেট দিয়েছে। এর আগেও রুবেল আমাকে থ্রেট দিয়েছে কিন্তু আমি কাউকে জানাতে চাই নি। সর্বশেষ ৫ এপ্রিল বেশ কঠোরভাবে আবারও থ্রেট দেয়। ফলে আমি চাই ওকে আর ক্ষমা করবো না। ওর এই নিচু কাজের শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে। মামলাটা এখন নারী ওশিশু নির্য়াতন ট্রাইবুনালে চলে গেছে। আমি নারজি দিয়ে এ মাসেই প্রতিবেদন পাঠাবো।’
রুবেল ইস্যু নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে হ্যাপী, অযথা জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি লোকের এমন কথাকে পাত্তা না দিয়ে হ্যাপী বলেন, ‘রুবেল ইস্যুতে কে কি বললো তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না আমি। আমি আমার অধিকার আদায়ের জন্য মামলা করেছি। ন্যায্য বিচার চাওয়া আমার অধিকার।’
কিন্তু এই মামলার শেষ কোথায়? এ প্রশ্ন হ্যাপীকেও ভাবিয়ে তোলে। তিনি বেশকিছু কথা আবারও পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘মাঝখানে একটা আবেগী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এখন আর এই ভুল করতে চাই না। রুবেল স্কাইপিতে কথা বলে আমাকে এপ্রিলের ৫ তারিখে থ্রেট দিয়ে মামলা শেষ করার কথা বলেছে। এটা কোর্টে আমি তুলবো। আমি অভিনয় ও মামলা দুটো নিয়েই সমানভাবে খেলবো। আদালতে তার এই নিচুতা প্রমাণ করার জন্যই আদালতে থ্রেট দেওয়ার রিপোর্টটাও দিবো। আশা করি এ মাসেই এর সুরাহা হবে।’
রুবেল ইস্যু ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠবে কি না জানতে চাইলে হ্যাপী বলেন, ‘এটা কোনো বাঁধা হবে না। ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছি, আরো ভালভাবে অভিনয় করতে চাই, ভাল ভাল ছবি করতে চাই।’
প্রতিবেদক: সুদীপ্ত সাঈদ খান; প্রিয়
Discussion about this post