একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত অন্যতম শীর্ষ অপরাধী মতিউর রহমান নিজামী। যেই দিনটিতে তিনি গণহত্যার নীলনকশা করেছিলেন, সেই দিনটিতেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হল।
পুরো হত্যাযজ্ঞ পরিকল্পিতভাবেই সম্পন্ন করা হয়। নিরস্ত্র গ্রামবাসীদের হত্যার পর ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ করে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। যার ফলশ্রুতিতে অনেক ধর্ষিতা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়, যারা ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন।
এই অভিযোগটি নিজামীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগুলোর মধ্যে ২ নম্বর। এটিসহ আরও দুইটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বদর প্রধান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড দেন। আর যা ২০১৬ সালে ১০ মে’র দিনগত রাতে (১২ টা ১০ মিনিটে) কার্যকর করে সরকার। যার মধ্য দিয়েই ৪৫ বছরের গ্লানি মুক্ত হল জাতি।
নিজামীর বিরুদ্ধে মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ৮টি অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল ট্রাইব্যুনালে। এর মধ্যে ২, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসিতে ঝুলতে হলো জামায়াতের এ শীর্ষ নেতার।
৬ নম্বর অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে নিজামীর নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে যায় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। তারা গ্রামে হামলা চালিয়ে ডা. আব্দুল আউয়াল ও তার আশেপাশের বাড়ির নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা করে।
আর ১৬ নম্বর অভিযোগ অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ঊষালগ্নে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। বুদ্ধিজীবী শ্রেণিকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার জন্য পরিকল্পিতভাবে আলবদর সদস্যরা ওই গণহত্যা চালায়। জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই গণহত্যার দায় নিজামীর ওপর পড়ে।
মতিউর রহমান নিজামী ১৯৪৩ সালের ৩১ মার্চ পাবনার সাঁথিয়া থানার মনমতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাইভেট ছাত্র হিসেবে ১৯৬৭ সালে গ্রাজ্যুয়েশন শেষ করেন।
এই জামায়াত নেতা ১৯৬৬-৬৯ সাল মেয়াদে পশ্চিম পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। এরপর ১৯৬৯-৭১ সাল মেয়াদে সমগ্র পাকিস্তান ছাত্র সংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাহায্যকারী হিসেবে গড়ে তোলেন আল-বদর বাহিনী। ছাত্র সংঘের দায়িত্ব শেষে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামে।
১৯৭৮-৮২ মেয়াদে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য থাকার পর ১৯৮৩-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৮-২০০০ মেয়াদ জামায়াতের সেক্রেটারির দায়িত্ব নেন। ২০০০ সাল থেকে ফাঁসিতে ঝোলার আগ পর্যন্ত দলটির আমির ছিলেন বদর প্রধান নিজামী।
নিজামী ১৯৯১ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংদসদের সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমনকি দ্বিতীয়বার এমপি হলে চার দলীয় জোট সরকারের সময় প্রথমে কৃষি ও পরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়েছিল এ যুদ্ধাপরাধীকে।
Discussion about this post