তাঁর নাম রাবেয়া বেগম। তাঁর দাবি, এখন তাঁর বয়স ৯১ বছর। অস্ত্র মামলার অভিযুক্ত আসামি তিনি। প্রায় ১৫ বছর আগে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় করা অস্ত্র মামলায় ঢাকার আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। কিন্তু মামলার বিচার শেষ হয়নি। রাবেয়ার বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার সমেতপুর গ্রামে।
রাবেয়ার মামলাটি ঢাকার এক নম্বর অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। গতকাল সোমবার হাজিরা দিতে আদালতে আসেন রাবেয়া। হাজিরা দেওয়ার পর আদালত চত্বরে রাবেয়া বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, বয়সের কারণে ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না তিনি। প্রায় অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকেন। তারপরও এই অসুস্থ শরীর নিয়েও তাঁকে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। মামলাটি নিষ্পত্তি হলে তিনি হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ছয় মাস কারাগারেও ছিলেন তিনি। পরে জামিন পান।
আদালত সূত্র বলছে, অস্ত্র মামলাটি আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ২১ মে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ অনুযায়ী, ২০০২ সালের ১ জুন রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন কাজীপাড়া এলাকায় রাবেয়ার নিজ বাসা থেকে একটি বিদেশি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে আসামি তখন ওই অস্ত্রের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তিনি পুলিশকে জানান, জুলহাস নামের এক লোক তাঁকে অস্ত্র রাখতে দেয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল আজিজ ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর রাবেয়া ও জুলহাসের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরের বছর আদালত রাবেয়া ও জুলহাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। তখন আদালতে রাবেয়া নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বিচার চান। ১৫ জন সাক্ষীর মধ্যে পাঁচজনের সাক্ষ্য নিয়ে আদালত মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করেন। মামলার অপর আসামি জুলহাস জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আজিজ ২০০৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মারা যান। যে অস্ত্রটি জব্দ করা হয়েছিল তা গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি অস্ত্রটির মালিক শেখ ফরিদের জিম্মায় দিয়েছেন আদালত।
রাবেয়াকে আদালতে নিয়ে আসেন তাঁর জামাই। মেয়ের সঙ্গে মিরপুরে বসবাস করেন রাবেয়া। তিনি বললেন, তাঁর এক ছেলে, দুই মেয়ে। মেয়ের কাছে থাকেন। ঠিকমতো ভাত খেতে পারেন না। ১৫ বছর ধরে মামলা চালাতে গিয়ে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। সুদের টাকা নিয়ে মামলা চালিয়েছেন। রাবেয়া আরও বলেন, ‘সুদের টাকা দিতে দিতে আমার জীবন শেষ। আমি আর মামলা চালাতে পারছি না।’
মামলার এজাহার অনুযায়ী, রাবেয়ার বয়স এখন ৭৫ বছর। তবে তাঁর আইনজীবী মেহেদী হাসান দাবি করেন, রাবেয়ার বয়স সত্যি ৯০-৯১ বছর। প্রায় সময় তিনি অসুস্থ থাকেন। মামলা যেহেতু চলমান তাই তাঁকে নিয়মিত আদালতে আসতেই হয়। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে আসতেই হবে।
-প্রথম আলো
Discussion about this post